বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে কয়েক মাস কাটানো শেষে গত শুক্রবার রাতে সোনা মসজিদ-মাহাদিপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরার পর নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি বলেন, ‘বাংলায় কথা বলেছিলাম বলেই দিল্লি পুলিশ আমাকে আটক করেছিল। আমরা জানিয়েছিলাম, আমরা বাংলাদেশি নই। কিন্তু তার পরেও পুলিশ দাবি করে- আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এরপর বিমানে করে নিয়ে এসে বিএসএফের গাড়িতে করে আমাদের সীমান্তে নিয়ে যায়। পরে তারা বাংলাদেশের একটা জঙ্গলে আমাদের ছেড়ে দিয়েছিল।’
গতকাল দুপুরে আট মাসের পুত্র সন্তানকে নিয়ে বীরভূম জেলার পাইকর গ্রামের বাড়িতে ফেরেন সোনালী। এরপর কার্যত উৎসবের চেহারা নেয় পাইকর গ্রাম। প্রচুর মানুষ সোনালীকে দেখতে হাজির হন। গণমাধ্যমের কর্মীরাও তার সাক্ষাৎকার নিতে বাড়িতে ভিড় জমান। পরে তার বাড়িতে এসে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যসভার তৃণমূল কংগ্রেস সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম।
গণমাধ্যমে সোনালী বলেন, ‘দিল্লি পুলিশ আমাদের ওপর ভীষণ অত্যাচার চালিয়েছিল। ওদের পায়ে-হাতে ধরেছি। কোনো কাজ হয়নি। পরে বিএসএফ-এরও হাত-পা ধরেছি। কিন্তু ওরা কোনো কথা না শুনে আমাদের জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছিল। দুই রাত জঙ্গলে কাটাতে হয়েছে।’ বাংলাদেশে কারাগারে থাকাকালীন তার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন সোনালী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকাকালীন পুলিশ কোনো অত্যাচার করেনি। কিন্তু খাবারের প্রচণ্ড কষ্ট ছিল।’
উল্লেখ্য, সোনালী পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা হলেও গত এক দশক ধরে দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করত তার পরিবার। কাজের সূত্রে স্বামী দানিশ শেখ এবং আট বছরের ছেলেকে নিয়ে দিল্লির রোহিণীর ২৬ নম্বর সেক্টরে থাকতেন সোনালী বিবি। কিন্তু বাংলাদেশি সন্দেহে চলতি বছরের ১৮ জুন তাদের গ্রেপ্তার করে দিল্লির কে এন কাটজু মার্গ থানার পুলিশ। ২৭ জুন আসাম সীমান্ত দিয়ে তাদের বিএসএফের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অনুপ্রবেশের মামলায় স্থানীয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এই অবস্থায় ১০০ দিনেরও বেশি সময় তারা স্থানীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে সোনালী বিবিসহ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের এই আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড ও কয়েকটি এনজিও। এরই প্রেক্ষিতে গত বুধবার বাংলাদেশ থেকে সোনালীকে দেশে ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় ভারতের শীর্ষ আদালত। সেই মতো দীর্ঘ আইনি জটিলতা কাটিয়ে সোনালী বিবি এবং তার নাবালক সন্তান ভারতে ফিরে আসতে পারলেও সোনালীর স্বামী দানিশ শেখসহ বাকি চারজন এখনো বাংলাদেশে রয়েছেন।