পবিত্র কোরআন পাঠ ও দোয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের শিলান্যাস (ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন) করা হয়েছে। সাসপেন্ডেড তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এই শিলান্যাস করেন।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পূর্তির দিনে বেলডাঙা ও রেজিনগরে মধ্যবর্তী স্থানে বাবরি মসজিদের আদলে এই নতুন মসজিদের শিলান্যাস করা হলো। দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয় এই শিলান্যাস পর্ব। এ সময় কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া অনুষ্ঠান এবং মুসলিম নেতাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর দুপুর দেড়টায় মঞ্চ থেকেই ফিতে কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে হুমায়ুন কবীর ছাড়াও মুসলিম ধর্মগুরু, ইমাম, মুয়াজ্জিনরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় হুমায়ুন কবীর তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে বাবরি মসজিদ করতে বাধা দিচ্ছে। আগামী দিনে গোটা বাংলার মুসলিম সমাজ এই সরকারকে এর জবাব দেবে।’ তিনি শিলান্যাস সম্পর্কে বলেন, ‘আমি কোনো সাংবিধানিক কাজ করছি না। ভারতের সংবিধানকে সম্মান জানিয়ে এই কাজ করা হচ্ছে। সংবিধান অনুসারে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী মানুষের নিজেদের অধিকার আছে, কেউ চার্চ বানাতে পারে, কেউ গির্জা বানাতে পারে, কেউ মন্দির বানাতে পারে। আমরা যেহেতু মুসলিম, তাই আল্লাহর ঘর মসজিদ বানাতে পারি। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ এটাকে হতে দিতে চায়নি।’
সংখ্যালঘু ভোটকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের ৭ কোটি ৬৬ লাখ ভোটারের মধ্যে ২ কোটি ৮২ লাখ ৫৩৩ জন মুসলিম ভোটার আছে। এই বাঙালি মুসলিমদের কাছে আমার আবেদন, ৪২ থেকে ৮২ শতাংশ মুসলিম রয়েছে- এমন ৯০টি আসনে মুসলিম জনপ্রতিনিধিদের জয়ী করে বিধানসভায় পাঠাতে হবে। আমি মুসলিম সমাজের কাছে একটাই কথা বলব, আপনারা যাকে খুশি মুসলমানদের বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়ে বিধানসভায় পাঠান। সেক্ষেত্রে রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে বাকি ২০৪টি আসনে মমতা ব্যানার্জি ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে লড়াই হোক। তাদের মধ্যে কে ক্ষমতায় আসবে হিন্দু সমাজ সিদ্ধান্ত নিক। তারা সরকারে থাকুক, আমরা বিরোধী চেয়ারে থাকব। তখন বিধানসভায় আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে নিজেদের অধিকার বুঝে নেব, উন্নয়ন বুঝে নেব।’
জানা গেছে, রাজ্যের প্রায় সব জেলা থেকে বহু মানুষ এই মসজিদ নির্মাণে আর্থিক সাহায্য করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সংস্থা ৮০ কোটি রুপি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ধারণা পাওয়া গেছে, ৩ কাঠা জমির ওপর তৈরি হবে মূল বাবরি মসজিদ।
২৫ বিঘা জমির ওপর মসজিদ চত্বরেই তৈরি হবে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, রেস্তোরাঁ, উদ্যান এবং হেলিপ্যাড। এর জন্য সম্মিলিত ভাবে ৩০০ কোটি রুপি খরচ ধরা হয়েছে।