জুলাই বিপ্লবের আগে তারা ছিলেন যুবলীগ-তাঁতী লীগের প্রভাবশালী নেতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র খুন ও হামলা মামলার আসামিও। কিন্তু শেখ হাসিনার পলায়নের পর ‘ডিগবাজি’ দিয়ে বনে যান ‘জুলাই ত্যাগী’। গঠন করেন ‘সোহেল-বোরহান বাহিনী’। চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানা এলাকায় দখলবাজি থেকে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ হরেক রকমের অপরাধে সম্পৃক্ত। এ বাহিনীর লাগাম টানতে মাঠে নেমেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, পুলিশের ছত্রছায়ার সোহেল-বোরহান বাহিনী হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য।
চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান অভিযোগ করেন, আগে যারা যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ করতেন তারা এখন নতুন রূপে মাঠে নেমেছেন। তারা বাকলিয়া এক্সেস রোডে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। চাঁদাবাজি-দখলবাজিসহ সব ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত। তাদের বিষয়ে প্রতিদিন শত শত অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান পুলিশের (সিএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার আমিনুর রশিদ বলেন, বাকলিয়া এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশের সব ইউনিট। এরই মধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো অপরাধীকে পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ নেই। কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের কাজ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের পটিয়া আসনের সাবেক এমপি ও হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু শামসুর হাত ধরেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি নজরুল ইসলাম সোহেলের। বিচ্ছু শামসুর আশীর্বাদে হন পটিয়া জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন তাঁতী লীগের আহ্বায়ক। একইভাবে বোরহান উদ্দিনও ছিলেন বাকলিয়া যুবলীগের ‘প্রভাবশালী’ নেতা। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আন্দোলনে নিহত ওয়াসিম হত্যা মামলার আসামি সোহেল। ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয় বোরহানের বিরুদ্ধেও। কিন্তু শেখ হাসিনার পলায়নের পর এ দুজন ‘ডিগবাজি’ দিয়ে বনে যান ‘আগস্টের ত্যাগী নেতা’। এই ব্যানারে হয়ে যান বাকলিয়া থানা এলাকার হর্তাকর্তা। বাকলিয়া এলা
কায় গঠন করেন সোহেল-বোরহান বাহিনী। এ বাহিনীতে রয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন সদস্য। তাদের সবাই একসময় ছিলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারাও করেন রূপ পরিবর্তন।
এক বছর ধরে বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ রোড, বাকলিয়া এক্সেস রোড, শাহ আমানত হাউজিং সোসাইটি, সৌরভী আবাসিক, নতুন ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় রাজত্ব করছে এ বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, বাকলিয়া থানা এলাকার মাদক কারবার, বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ, টেম্পু স্ট্যান্ড ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চাঁদাবাজি, ইট-বালু-সিমেন্ট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানান অপরাধে এ বাহিনী সম্পৃক্ত। ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েও সংঘাতের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় খুন হয়েছের বাকলিয়ার ছাত্রদল নেতা মো. সাজ্জাদ। এ ঘটনায় সাজ্জাদের বাবা মো. আলম বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনার অন্যতম আসামি বোরহান ও সোহেল। নিহত সাজ্জাদের বাবা মো. আলম অভিযোগ করেন, বাকলিয়া এলাকায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। এ মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আসামিরা এখন ষড়যন্ত্র করছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।