আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য। এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখে ৬৪ জেলার নতুন পুলিশ সুপারসহ মাঠ পুলিশের কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াতসহ বড় রাজনৈতিক দলের চাপ মোকাবিলা আগামী নির্বাচনে পুলিশের প্রধান চ্যালেঞ্জ। লুট হওয়ার পর এখনো উদ্ধার না হওয়া সহস্রাধিক আগ্নেয়াস্ত্র আসন্ন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে বড় ধরনের প্রভাব তৈরি করতে পারে। নির্বাচনের আগেই গুলি করে প্রকাশ্যে কয়েকটি হত্যাকাণ্ড এ আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে পুলিশকে নির্মোহ ও নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো দলের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের আচরণবিধি, নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, ভোট কেন্দ্র ও বুথের নিরাপত্তা এবং নির্বাচনি সহিংসতা দমনে পুলিশ সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখনো ১ হাজার ৩৫০টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। নির্বাচনি সহিংসতায় এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হতে পারে। তাই নির্বাচনের আগে এগুলো উদ্ধারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গত ১১ নভেম্বর ঠাকুরগাঁয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের দুই কর্মীকে ছাড়িয়ে নিতে এসে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দেন পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল হুদা। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওসির উদ্দেশে যুবদল নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’ ওসিকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় যুবদল নেতা নাজমুল হুদাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল। সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালী থানার ওসি মনজুরুল হককে ‘উলঙ্গ করে’ এলাকা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আকতার হোসেনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধেও পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, আসন্ন নির্বাচনে সহিংসতা একটা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়, তাহলে নির্বাচন কাক্সিক্ষত হবে না।
পুলিশ সূত্র জানায়, অবৈধ অস্ত্রের বড় অংশ সীমান্তপথে আসছে। কিছু অস্ত্র সরকারি বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্রের সঙ্গেও মিশে গেছে। নির্বাচনের আগেই এসব নিয়ন্ত্রণে না আনলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে। সীমান্তের অন্তত ২৫টি পথ দিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে। এর মধ্যে রয়েছে- বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি, থানচি, নেফিউ পাড়া, তমব্রু, কক্সবাজারের টেকনাফের কুতুবপালং ও উখিয়া, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, আখাউড়া, রাজশাহীর গোদাগাড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, রহনপুর, সোনা মসজিদ, আজমতপুর, বিলভাতিয়া, ঝিনাইদহের মহেশপুরের জুলুলি, সাতক্ষীরার কলারোয়ার তলুইগাছা ও শাঁকারা, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, মেহেরপুরের গাংনী ও কুষ্টিয়ার প্রাগপুর সীমান্ত এলাকা।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন বলেন, গত বছর লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৮০ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে।
বাকি ২০ শতাংশ উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। সব কার্যক্রমের পাশাপাশি আমরা অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে আসছি। আর যেসব বৈধ অস্ত্র অবৈধ হয়ে গেছে সেগুলোর ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে নির্বাচনের আগেই আমরা সব অস্ত্র উদ্ধার করতে পারব বলে আশা করছি।