নানা আয়োজনে বান্দরবানে উদ্যাপিত হয়েছে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি। তবে ঢাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ অবিলম্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ বাতিলের দাবি জানিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল পার্বত্য অঞ্চলে কোনো অবৈধ অস্ত্র থাকবে না। কিন্তু ২৮ বছরে অবৈধ অস্ত্র বরং আরও বেড়েছে এবং চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে। চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলকে উপজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চল ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।
চুক্তির ২৮ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য আরও বেড়েছে এবং চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পরিষদের মহাসচিব মো. আলমগীর কবির। তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তির দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র, হত্যা, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। উপজাতিদের ছয়টি সশস্ত্র সংগঠন নিয়মিত এসব অপরাধে জড়িত এবং বছরে তারা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে কয়েক হাজার বাঙালি জনগোষ্ঠীকে হত্যা করেছে। এ সময় অনেক সেনা, পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও প্রাণ দিয়েছেন। পরিষদের মহাসচিব বলেন, চুক্তি মোতাবেক ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে, তিনটি ধারা বাস্তবায়নাধীন এবং চারটি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত। এ ছাড়া ২৩৯টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে প্রত্যাহার করা সেনা ক্যাম্পগুলো পুনঃস্থাপনের দাবি জানায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। এ সময় সংগঠনের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বান্দরবানে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপিত : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে বান্দরবানের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (কেএসআই) প্রাঙ্গণে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং বান্দরবান সেনা রিজিয়ন যৌথভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর থানজামা লুসাই। পরে কেএসআই সভাকক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেনাবাহিনী বান্দরবান সদর জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল মোহাম্মদ হুমায়ুন রশীদ, সেনা রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর পারভেজ রহমান, পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি : একই দিন সকালে এ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বান্দরবান জেলা কমিটি ‘জুম্মস্বার্থ পরিপন্থি ও পার্বত্য চুক্তিবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলন জোরদার করুন’ শীর্ষক এক গণসমাবেশ করেছে। বান্দরবান শহরের রাজার মাঠে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমিতির বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি সুমন মারমা। প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক উ উইন মং জলি।
বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন ফেডারেশনের বান্দরবান জেলার সভানেত্রী উলিসিং মারমা। বক্তারা বলেন, ২৮ বছরেও পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ ধারা বাস্তবায়ন হয়নি। তারা দ্রুত এ চুক্তির সব ধারা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।