দুর্বল ও সমস্যাগ্রস্ত ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ। গত রবিবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে সদ্য জারি করা ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫-এর আওতায়, যা ব্যর্থ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূত, পুনর্গঠন অথবা লিকুইডেশনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাঠামো হিসেবে পরিচিত।
বন্ধের তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আবিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট খেলাপি ঋণ দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের পরিশোধ না হওয়া ঋণের প্রায় ৫২ শতাংশ, যার পরিমাণ গত বছরের শেষে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। বহু প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদপূর্তির পরও আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়াই আমাদের প্রথম লক্ষ্য। সরকার মৌখিকভাবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বন্ধ হতে যাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে আটকে আছে ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আমানত ৩,৫২৫ কোটি টাকা, ব্যাংক ও করপোরেট আমানত ১১,৮৪৫ কোটি টাকা। ব্যক্তিগত আমানতের মধ্যে সর্বোচ্চ আটকে রয়েছে পিপলস লিজিংয়ে ১,৪০৫ কোটি টাকা। আবিভা ফাইন্যান্সে ৮০৯ কোটি টাকা। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ৬৪৫ কোটি টাকা। প্রাইম ফাইন্যান্সে ৩২৮ কোটি টাকা। এফএএস ফাইন্যান্সের ১০৫ কোটি টাকা।
৯টির মধ্যে ৭টিরই শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা অর্থাৎ সম্পদ বিক্রি করলেও শেয়ারহোল্ডাররা কিছুই পাবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বল তদারকি, সম্পর্কিত পক্ষকে ঋণ প্রদান, ঋণ পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতা এবং সম্পদের কৃত্রিম স্ফীতি-এসব কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বহু বছর ধরে কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় ছিল। এ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ এনবিএফআইকে ‘রেড ক্যাটাগরি’ হিসেবে চিহ্নিত করে। সেখান থেকেই ৯টি প্রতিষ্ঠানকে লিকুইডেশনের তালিকায় আনা হয়েছে।