বহির্বিশ্বে দিনদিন কঠিন হয়ে পড়ছে বাংলাদেশিদের অভিবাসন। পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর ভিসানীতির কারণে অভিবাসন জটিল হয়ে উঠছে। চলতি সপ্তাহে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের দরজা। এদিকে ইতালির ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় থাকায় ইউরোপেও কঠিন হয়ে পড়ছে বাংলাদেশিদের অভিবাসন। ভিসা নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও অলিখিতভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দিচ্ছে না পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিসার নিয়ম ভেঙে অন্য দেশে স্থানান্তর, মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করার কারণে বাংলাদেশিদের জন্য অভিবাসন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বজুড়েই অভিবাসনের জন্য আগ্রহের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর অনেকেই কড়াকড়ি আরোপ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো, কঠোর ভিসানীতি আরোপসহ সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে মার্কিন প্রশাসন। এ ছাড়া নিরাপত্তা ইস্যুতে চলতি সপ্তাহেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের দরজা। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, অভিবাসন রোধে যুক্তরাজ্যও কঠোর ভিসা নীতির পরিকল্পনা নিয়েছে। জার্মানিসহ কিছু দেশ অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকটি সদস্য দেশ ইতোমধ্যেই নিরাপদ দেশের তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশেরও। ফলে নিরাপদ তালিকাভুক্ত এসব দেশ থেকে যারা ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন তাদের আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিন মাসের মধ্যেই তাদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। এ ছাড়া পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। শুধু পশ্চিমা দেশগুলোই নয়, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বাংলাদেশিদের জন্য অভিবাসন কঠিন হয়ে পড়ছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও অলিখিতভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দিচ্ছে না বেশ কয়েকটি দেশ। ভিয়েতনাম, লাওস, মিসর, উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান বাংলাদেশিদের কোনো ভিসা দিচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হলেও বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও মালয়েশিয়া। এ ছাড়া কাতার, বাহরাইন, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোও ভিসা প্রদান সীমিত রেখেছে। এদিকে ভিসা দিলেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করাচ্ছে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া। এমনকি অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া শ্রীলঙ্কার ই-ভিসা পেতেও দু-তিন দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিসার অপব্যবহার করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অনিয়মিত পথে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন দেশে ঢোকার প্রবণতা, আর তা করতে সহজলভ্য দেশের ভিসা নিয়ে অন্যদেশে পাড়ি জমানোর ঘটনা দেশগুলোর প্রশাসনের চোখে পড়েছে। ফলে বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া ভুয়া নিয়োগপত্র, মিথ্যা তথ্য ও জাল ব্যাংক স্টেটমেন্টের কারণে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশি ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার বাড়ছে।
সংকট নিরসণে আগে নিজের ঘর গোছানোর উদ্যোগ নিতে বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের মূল কারণ জাল তথ্য দিয়ে আবেদন। একজনের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য বাকিদেরও সমস্যা হয়। বাংলাদেশের রেপুটেশনের প্রশ্নে ভিসা জটিল হয়ে গেছে। এজন্য আমাদের ঘর গোছাতে হবে। এ ছাড়া ভিসা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।