ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। পাল্টাপাল্টি এ হামলায় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বালিয়া বাজার এলাকায় তিনটি স্থানে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে ২০টি বসতবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। লুটপাট করা হয়েছে গবাদিগশুসহ বাড়ির মালামাল।
এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সূত্র জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গট্টি ইউনিয়নের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জাহিদ মাতুব্বর ও নুরু মাতুব্বরের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। সম্প্রতি এ বিরোধের জেরে উভয় নেতার সমর্থকদের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। জাহিদ ও নুরু মাতুব্বর বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের পতনের পর তারা উভয়ই বিএনপিতে যোগ দিয়ে গট্টি ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মাঝে মাঝে একপক্ষ আরেক পক্ষের সমর্থকদের ওপর হামলা-পাল্টা হামলা চালিয়ে আসছে। শুক্রবার বিকাল থেকে উভয় পক্ষে সমর্থকরা একে অপরের ওপর হামলার প্রস্তুতি নেয়। বিভিন্ন স্থান থেকে উভয় পক্ষ লোক ভাড়া করে নিয়ে আসে। শনিবার সকালে উভয় পক্ষের হাজারো সমর্থক ঢাল, কাতরা, ভেলা, টেঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে এ সংঘর্ষ বালিয়া বাজার, কাঠিয়ার গট্টি গ্রাম ও বালিয়া গট্টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে গট্টি ইউনিয়নের বালিয়া গট্টি, আড়ুয়াকান্দী, ঝুনাখালী, মেম্বার গট্টি, ভাবুকদিয়া, সিংহপ্রতাব, গট্টি, কানুইর, দিয়াপাড়া, জয়ঝাপ, আগুলদিয়া, মোড়হাটসহ অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ অংশ নেয়। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্কে এলাকার নারী ও শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। দফায় দফায় চলা এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। তাদের মধ্যে ৩০ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ২০টি বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ওমর ফারুক নামে এক যুবক তার পাঁচটি গরু লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে সালথা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক দফা চেষ্টার পর উভয় পক্ষকে হটিয়ে দিলে সংঘর্ষ থামে। এ বিষয়ে জাহিদ মাতুব্বর ও নুরু মাতুব্বর হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করেন। সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল বলেন, সকালে সংঘর্ষ শুরু হয়। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর বেলা পৌনে ১২টার দিকে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার সাতে যারা জড়িত রয়েছে তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।