ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জগৎপুর গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে দুই শতাব্দী পুরোনো একটি বিশাল বটগাছ, যা স্থানীয়দের কাছে ইতিহাস, স্মৃতি ও রহস্যের এক জীবন্ত নিদর্শন। কেউ বলেন গাছটির বয়স ২০০ বছর, আবার কারও ধারণা ২৫০ থেকে ৩০০ বছরেরও বেশি। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও গাছটি আজও সবুজ, সতেজ ও শাখায়-প্রশাখায় পরিপূর্ণ। সন্ধ্যা নামলেই চারপাশ মুখর হয়ে ওঠে পাখিদের কলরবে, আর দিনের বেলায় এটি হয়ে ওঠে শিশুদের খেলাধুলার নিরাপদ ছায়াঘেরা আশ্রয়। গাছটির নিচেই অবস্থিত জগৎপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুরে ছুটে আসে বটগাছের ছায়ায়; কেউ খেলে, কেউ বসে গল্প করে। বিকালে দেখা যায় কৃষকদের পার্টনার ফিল্ড স্কুল পরিচালনা করছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ। অর্থাৎ, দিনের বিভিন্ন সময় গাছটি শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক মিলনস্থল হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
গাছটির ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রবীণরা যেন ফিরে যান অতীতে। ৭০ বছর বয়সি আলী আহম্মদ জানান, জন্ম থেকে এ গাছকে তিনি এমনভাবেই দেখে আসছেন। দাদা-নানাদের মুখে বহু গল্প শুনেছেন এ বটগাছকে ঘিরে। তিনি বলেন, আগে রবিবার ও বৃহস্পতিবার এ বটগাছের নিচে হাট বসত। নাম ছিল দত্তেরহাট। পাশের বোলভোলা নদী দিয়ে নৌকা করে ব্যবসায়ীরা আসতেন। সময়ের পরিবর্তনে হাট বিলুপ্ত হলেও গাছটি আজও দাঁড়িয়ে আছে।
মোহাম্মদ ইব্রাহীম নামের আরেক প্রবীণ জানান, স্থানীয়দের কাছে এটি ‘সেবা গাছ’ নামেও পরিচিত। গাছটির নামে নথিভুক্ত রয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ জমি। অনেকে মনে করেন, ১৮৯০ সালে জগৎপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ারও বহু আগে থেকে গাছটি এখানে রয়েছে। সবুজ-শ্যামল এই বটগাছের নিচে বসলে যে কেউ প্রশান্তি পায়। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও ছায়াময় শান্ত পরিবেশ দেখতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে ভিড় করেন দর্শনার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা। দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে গ্রামবাসীর স্মৃতি, ইতিহাস আর সামাজিক জীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বটগাছ এখন দাগনভূঞার এক অনন্য ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও মূল্যবান হয়ে উঠছে।