দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি খুনাখুনির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিলেটে সহযোগীদের হামলায় এক কিশোর গ্যাং সদস্য, চট্টগ্রামে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে একজন, সিরাজগঞ্জে এক ইউপি সদস্য এবং বরিশালে একজন খুন হয়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিলেট : সিলেটে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্য খুন হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগরীর বাদামবাগিচা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অপর সদস্যরা তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল। গতকাল সকালে ওসমানী হাসপাতালে সে মারা যায়। কিশোরের নাম শাহ মাহমুদ হাসান তপু (১৭)। সে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার ইলাশকান্দি বাদামবাগিচা উদয়ন ৪০/২ নম্বর বাসার শাহ এনামুল হকের ছেলে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার, উপকমিশনার মো. তারেক আহমদ জানান, কিশোরদের দুই গ্রুপের বিরোধকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে একটি গ্রুপের প্রধান নগরীর খাসদবির এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে মো. জাহিদ হাসানের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে অপর গ্রুপের সদস্য শাহ মাহমুদ হাসান তপু গুরুতর আহত হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হলে গতকাল সকাল ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে অভিযান চালিয়ে জাহিদ ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সহযোগীরা হলো নগরীর লোহারপাড়া এলাকার আবদুুল মনিরের ছেলে মো. অনিক মিয়া ও মো. বশিরুল ইসলামের ছেলে মো. জুনেদ আহমদ।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি জেলা পরিষদ মার্কেটের বিপরীতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ইসমাইল নামে এক যুবক খুন হয়েছেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সিএমপি কমিশনারের পুরাতন কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ইসমাইল পেশায় ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি কোতোয়ালি থানার কাছে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, ইসমাইল লালদীঘির পাড়, পুরাতন গির্জাসহ আশপাশের এলাকায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে সাইকেল চালিয়ে লালদীঘির পাড় থেকে ফিরিঙ্গিবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন ইসমাইল। জেলা পরিষদ ভবনের বিপরীতে কোতোয়ালিমুখী সড়কে তিনজন ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে। ধস্তাধস্তির মধ্যে তাদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ইসমাইল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পেয়ারা খাতুন (৩২) নামে এক নারী ইউপি সদস্যকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সকালে হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের রতনকান্দি গ্রাম থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পেয়ারা খাতুন ওই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন। তিনি রতনকান্দি গ্রামের হানিফ সরকারের মেয়ে। ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী হাবিবুল্লাহ আবদুল আলীম পলাতক রয়েছেন। তিনি নগর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। নিহতের চাচা রহিম উদ্দিন সরকার জানান, প্রায় এক বছর আগে পেয়ারা খাতুন প্রথম স্বামীকে তালাক দেন। পরে আবদুল আলীমের স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও চাপ সৃষ্টি করে তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর পেয়ারার কাছ থেকে ধাপে ধাপে প্রায় ১৭ লাখ টাকা নেন আলীম। এরপর থেকেই দাম্পত্যকলহ ও নির্যাতনের ঘটনা বাড়তে থাকে। বিষয়টি নিয়ে গ্রামে শালিসও হয়েছিল। রহিম উদ্দিনের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে পেয়ারা খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আলীম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যায়।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম আলী বলেন, প্রাথমিকভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আলীম একই বাড়িতে তাঁর দুই স্ত্রী নিয়ে থাকতেন। ঘটনাটি জানার পর থেকে তিনি অন্য স্ত্রীকে নিয়ে পলাতক। তদন্ত চলছে।
বরিশাল : বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে শহীদ নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার ১৩ নম্বর গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মেঘারচর নামক পাতাবন পথে লাশটি উদ্ধার করা হয়। শহীদ খাঁ (৬৫) হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মৃত জয়নাল খাঁর ছেলে। তিনি হোগলা পাতার ব্যবসা করেন। পুলিশ জানায়, শহীদের মুখ থেঁতলানো, হাত বিচ্ছিন্ন, পেট কাটা দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে কে বা কারা হত্যা করেছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শহীদের ছেলে খবির হোসেন বলেন, আমার বাবা ২২ দিন আগে গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মেঘারচরে হোগলা পাতা কাটার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। চরে গিয়ে আমাদের জানান, তিনি পাতা কাটছেন। হঠাৎ গত তিন দিন তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যে নম্বর দিয়ে এতদিন যোগাযোগ করেছিলেন সে নম্বরটি বন্ধ বলছে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই চরে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেন।