রাতযাপনের সুযোগ না থাকা ও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ না যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের এক মাসেও সেন্ট মার্টিনমুখী হননি পর্যটকরা। ফলে সেন্ট মার্টিনে এখনো এক প্রকার হাহাকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের আশা, খুব দ্রুত এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবেন তারা। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্ট মার্টিন গমন করবে। একই সঙ্গে ওইদিন থেকে পর্যটকরা রাতযাপনেরও সুযোগ পাবেন।
অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটের মুখে পড়ায় ২০২৩ সাল থেকে সরকার দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়। গেল নভেম্বর থেকে নয় মাস পরে এখানে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও রাতযাপনের সুযোগ না থাকায় কেউ সেন্ট মার্টিন যাওয়ার আগ্রহ দেখায়নি। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে কেবল দৈনিক দেড় হাজার পর্যটক যাওয়া ও রাতযাপনের অনুমতি দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। সেন্ট মার্টিন রুটের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ-এর ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক নিয়ে ৭ জাহাজ চলাচল করবে।
সরকারি সিদ্ধান্ত মতে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস দ্বীপটিতে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন পর্যটকেরা। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দেড় হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে পর্যটকদের মানতে হবে সরকারের ১২টি নির্দেশনা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
তথ্য অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। পর্যটকদের ভ্রমণকালে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষেধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যে কোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
ভ্রমণকালে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।