পিনন ও হাদি। অর্থাৎ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের পিরদানের বিশেষ পোশাক। ওড়নার মতো গায়ে জড়ানো অংশকে বলা হয় হাদি আর কোমরে প্যাঁছানোর কাপড়টাকে বলা হয় পিনন। কোমর তাঁতে বুনন করতে হয় এ পোশাক। তাই আকর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেশি। আবার দামও বেশি। রাঙামাটিতে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন শনিবার ও বুধবার বসে এ পিনন হাদির হাট। এক হাটে পিনন ও হাদি বেচাকেনা হয় প্রায় লাখ টাকা। বুধবার ছিল রাঙামাটি বনরূপা বাজারে পিনন হাদির হাটের দিন। এদিন ভোর থেকে শহরের বনরূপা ও সমাতাঘাটে পিনন হাদির পসরা সাজিয়ে বসেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা। ১০ থেকে ১৫ জনের একটি নারীদের দল এ পিনন হাদির ব্যবসা করেন।
নানা রঙে রেশমি সুঁতায় তৈরি পিনন হাদি নিয়ে আসেন নারী ব্যবসায়ীরা। তাই ক্রেতারাও ভিড় জমান হাটে। কেউ নিত্যদিন পরিদানের জন্য কেনেন। আবার কেউ বিয়ে কিংবা পার্টির জন্য কেনেন এসব পিনন হাদি। তবে কাপড়ের মান আর নকশার ডিজাইনের কারণে ভিন্নতা রয়েছে দামেও। এক জোড়া সাধারণ পিনন হাদির সর্বনিম্ন দাম ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। একটু আকর্ষণীয় ডিজাইনের পিনন হাদির দাম ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর বিয়ে কিংবা পার্টির জন্য তৈরি পিনন হাদি বিক্রি হয় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। কখনো কখনো ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয় এসব পিনন হাদি।
রাঙামাটির রাঙাপানি এলাকার পিনন হাদি কারিগর মনিকা চাকমা বলেন, ‘কোমর তাঁতে নিপুণ হাতের নকশায় রেশমি সুঁতায় তৈরি করা হয় এসব বস্ত্র। রংবেরঙের আকর্ষণীয় ডিজাইনে এ কাপড়ের সুঁতার দাম একটু বেশি। তাই মজুরি আর সুঁতার টাকার হিসাব করে দাম নির্ধারণ করা হয়। কল্পনা চাকমা নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘একটা সময় আমি নিজেও এ পিনন হাদি তৈরি করতাম। কিন্তু এখন যারা বুনন করে তাদের কাছ থেকে কিনে আবার হাটে তুলি। এতে লাভ বেশি। প্রতি জোড়া পিনন হাদিতে প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা লাভ থাকে। তাই এ ব্যবসা ধরে রেখেছি।’ জয়ন্তি চাকমা নামে আরেক নারী বলেন, ‘এক জোড়া পিনন হাদি তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। এটা খুবই কষ্টের। এখন তো সুঁতার দামও অনেক বেশি। তাই কাপড়ের দাম দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড়ি গ্রাম থেকে এসব বুনন করা কাপড় সংগ্রহ করতেও টাকার প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে বিক্রি করে মুনাফা তোলা লাগে। মার্কেট কিংবা শপিং মলে দোকান দিতে লাখ টাকা সালামি লাগে। পাহাড়ের কোমর তাঁতে তৈরি কাপড় এখন কক্সবাজার, ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত হচ্ছে। এদিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাহাড়ের এসব নারী উদ্যোগতারা কর্মসংস্থানের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে পারবেন বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।