৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জলকামান ছুড়ে, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরোধের পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গতকাল সন্ধ্যায় জলকামান ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। আহত ব্যক্তিরা হলেন শাহিন (২৮), আশিকুর রহমান (২৯), শাকিল আহমেদ (২৮), রিয়াজ (২৭) ও আবরার শাহরিয়ার উল্লাস (২৮)। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ ফারুক জানান, শাহবাগ থেকে ৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রার্থীদের আহত অবস্থায় ঢামেক জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে জরুরি বিভাগে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। আন্দোলনরত ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনার দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় বিনা উসকানিতে পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা করে। শাকিল আহমেদ নামে আহত এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে আমাদের বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল (রেজাল্ট) দেয়। কিন্তু তারা আমাদের লিখিত পরীক্ষার জন্য তেমন কোনো সময় না দিয়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে। গত এক মাস পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে শাহবাগ এলাকায় আন্দোলন করছি। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বসেছিলাম। শেষ পর্যন্ত বলেছিলাম ২৮ ডিসেম্বর আমাদের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করার জন্য, কিন্তু তারা সেটি না করে চলতি মাসের ২৭ তারিখ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বেলা ১টায় যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেন ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলনকারীরা। শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে সেখানেই অবস্থান নেন তাঁরা। দাবি মেনে নিতে আন্দোলনকারীরা বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। পরে সন্ধ্যায় তাঁরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে যমুনা অভিমুখে রওনা হলে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও জলকামান নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরীক্ষার্থীদের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতেও দেখা যায়।
উল্লেখ্য ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর শুরু হবে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের পদসংশ্লিষ্ট বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ : ৪৭তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে দফায় দফায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তারা ৪৭তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল বেলা সোয়া ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রথম দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক-সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় লেন আটকে বিক্ষোভ করেন তারা। ৩০ মিনিট বিরতি দিয়ে ফের তারা সড়কটি অবরোধ করেন। এই কর্মসূচি বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় লেনে তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়। তবে অ্যাম্বুলেন্সেসহ জরুরি পরিষেবার যানবাহনগুলোর যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেন আন্দোলনকারীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রবিউল আলম বলেন, ‘তাড়াহুড়া করে পিএসসি আমাদের ওপর ৪৭তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষা চাপিয়ে দিচ্ছে। এটা আমাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা গত এক মাস ধরে পিএসসিকে স্মারকলিপি দেওয়া, পিএসসির সামনে অবস্থান কর্মসূচি, শাহবাগ ব্লকের সঙ্গে সমন্বয় করে সারা দেশে আমাদের আন্দোলন চলমান রেখেছি। কিন্তু পিএসসির নির্দেশে আমাদের স্টুডেন্টদের ওপর তারা পুলিশি হামলা, নির্যাতন করেছে। আমাদের স্টুডেন্টরা গত তিন দিন ধরে আমরণ অনশন করলেও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা দেখছি না। তাই আমরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছি। আমরা ৪৭তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষার জন্য যৌক্তিক সময় চাচ্ছি।’
এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির উত্তরাঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তৌহিদ মো. সিয়াম ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘৪৭তম বিসিএসের রিটেন পরীক্ষার সময় পেছানো নিয়ে যেই আন্দোলনটা চলছে এইটা মোটেও যৌক্তিক লাগছে না।’