রাজধানীর মৌচাকে একটি হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা প্রাইভেট কার থেকে দুই লাশ উদ্ধারের ঘটনার মৃত্যুরহস্য নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। এ ঘটনায় মারা যাওয়া জাকির ও মিজানের লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টেও আসেনি মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ। ঘটনাস্থল ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করেও সন্দেহভাজন কেউ শনাক্ত হয়নি। লাশ উদ্ধারের পর ভিকটিমদের পরিবারের পক্ষ থেকে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ তোলা হলেও সেটিরও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পায়নি পুলিশ। তবে প্রাইভেট কারটি থেকে প্রাণঘাতী কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস নিঃসরণের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। বিষয়টি আরও অধিকতর নিশ্চিত হতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাইভেট কারটির ফরেনসিক করা হচ্ছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুর কারণ হিসেবে এখন পর্যন্ত গাড়ির ভিতরে তৈরি হওয়া বিষাক্ত গ্যাসকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। হত্যার কোনো ক্লু ও প্রমাণ পাওয়া না গেলে বিষাক্ত গ্যাসেই মৃত্যু উল্লেখ করে মামলার প্রতিবেদন দেওয়া হবে। জানা যায়, এর আগে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকায় গাড়ির ভিতর থেকে দুই মোটরশ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে গাড়ির গ্যাসে তাদের মৃত্যু হয় বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ১৮ আগস্ট গাজীপুর নগরের খাইলকুর এলাকায় গাড়ির ভিতর থেকে নিহত শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনাটিও মৃত্যুর জন্য গাড়ির বিষাক্ত গ্যাসকে দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছিল পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার এসআই মো. আওলাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা অন্য সব বিষয়কে সামনে এনে গুরুত্বসহকারে মামলাটির তদন্ত করছি। হত্যার প্রমাণ পেলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে। আর হত্যার প্রমাণ না পেলে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১১ আগস্ট হাসপাতালটির পার্কিং থেকে জাকির হোসেন (৩০) ও মিজানুর রহমান (৩৫) নামে দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুজনেরই শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গিয়েছিল। এ ঘটনায় গাড়িটির চালক জাকিরের বাবা আবু তাহের বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। ঘটনার পর প্রাইভেট কারটির মালিক জোবায়ের জানিয়েছিলেন, প্রতিবেশী একজনের অসুস্থ শিশুকে আনতে ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন জাকির ও মিজান। শিশুটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগপর্যন্ত গাড়িতে ঘুমানোর কথা বলেছিলেন তারা। ছাড়পত্র দিলে শিশুটিকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে ফেরার কথা ছিল মৃত্যু হওয়া দুজনের।