সংকটে থাকা দেশের পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন বড় ইসলামি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশাসকদের সহায়তার জন্য আরও চারজন করে কর্মকর্তার নামও প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ১৬ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকরা দায়িত্ব নেবেন একই দিন। প্রশাসকদের দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নিয়োগ বাতিল হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তুত খসড়া অনুযায়ী এক্সিম ব্যাংকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শওকাতুল আলমকে। তিনি ১৯৯৬ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দেন। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে প্রশাসক হচ্ছেন নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন, ইউনিয়ন ব্যাংকে সিলেট অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে টাঁকশালের পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান দায়িত্ব পাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে শওকাতুল আলম ছাড়া বাকি সবাই ১৯৯৯ ব্যাচের কর্মকর্তা। প্রশাসক নিয়োগের পর প্রধান অগ্রাধিকার হবে আমানতকারীদের সম্পূর্ণ টাকা ফেরত নিশ্চিত করা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তা রক্ষা। তবে ভুয়া সনদ বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বিষয়ে বিদ্যমান নিয়মে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এ ধরনের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এজন্য প্রতিটি ব্যাংকে প্রশাসক ও সহকারী কর্মকর্তা নিয়োগের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। একীভূতকরণ শেষে নতুন ব্যাংক গঠন হবে। সেখানে আলাদা পরিচালনা পর্ষদ ও নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।
এরপর প্রশাসকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ফিরে যাবেন।’ একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এসব ব্যাংকের বর্তমান শেয়ার শূন্য হয়ে যাবে। নতুন ব্যাংক হিসেবে গঠনের পর নতুনভাবে শেয়ার ইস্যু করা হবে। তবে ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের উপদেষ্টা বা অন্য কোনো ভূমিকায় রাখা যায় কি না, তা এখনো আলোচনায় রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলো রক্ষা করার পাশাপাশি সামগ্রিক আর্থিক খাতের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছে বাংলাদেশ ব্যাংক।