মহান আল্লাহ কোরআন ও তার নবীর মাধ্যমে ইসলামের সব বিধিবিধান চূড়ান্ত করে দিয়েছেন। কেয়ামত পর্যন্ত ইসলামের ভিতর নতুন ধারা সৃষ্টি কিংবা সংযোজন-বিয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে বাউলদের বিশ্বাস, চিন্তাধারা ও ব্যাখ্যা শুনলে স্পষ্ট হয়, তারা আল্লাহর দেওয়া ইসলামের বাইরে নিজেদের মনগড়া ভিন্ন এক ইসলামে বিশ্বাসী। অনেকে আবার তাদের এই বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যাকে ইসলাম ধর্মের একটি সহজ ও আধ্যাত্মিক ধারা মনে করে থাকে। যা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তি। তাই নিজেদের ইমান সুরক্ষার প্রয়োজনে বাউলবাদের বিশ্বাস, চিন্তাধারা ও কর্মপন্থা সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকা আমাদের জন্য আবশ্যক।
‘বাউল’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘বাউর’ থেকে, যার অর্থ স্বেচ্ছাচারী, বিশৃঙ্খল বা উন্মাদ। কেউ বলেছেন, সংস্কৃত ‘বায়ু’ থেকে বাউল শব্দটির উৎপত্তি, বাংলার যেসব লোক ‘বায়ু’ অর্থাৎ শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়ার সাহায্যে সাধনার মাধ্যমে আত্মিক শক্তি লাভ করার চেষ্টা করেন, তারাই বাউল। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সংস্কৃত ‘বাতুল’ শব্দ থেকে বাউল শব্দটির উৎপত্তি, কেউ বলেছেন ‘বাউর’ শব্দ থেকে বাউলের উৎপত্তি, এর অর্থ এলোমেলো, বিশৃঙ্খল, পাগল।
আহমদ শরীফ তাঁর ‘বাউলতত্ত্ব’ বইটিতে বাউল ধর্মমত সম্পর্কে বলেন, ব্রাহ্মণ্য, শৈব ও বৌদ্ধ সহজিয়া মতের সমবায়ে গড়ে উঠেছে একটি মিশ্রমত যার নাম নাথপন্থ। দেহতাত্ত্বিক সাধনাই এদের লক্ষ্য। (উইকিপিডিয়া)
বাউলরা লোকসম্প্রদায়ের একটি সাধনভজন গোষ্ঠী। কোনো ধর্মগ্রন্থে তাদের বিশ্বাস নেই। বাউল সাধনা মূলত নারীপুরুষের যুগলসাধনা (বাংলাপিডিয়া)। তাদের গানে আরবি শব্দের ব্যবহার দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হন। অথচ বাস্তবতা হলো, বাউলরা ইসলামের প্রথাগত বিধিবিধান ও ইবাদতে বিশ্বাসী নয়। তাদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তা মানবদেহের ভিতরেই বাস করেন।
বাউলরা যদি পৃথক ধর্মপরিচয় নিয়ে নিজেদের মতো বসবাস করে, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা নিজেদের মুসলমান দাবি করে, আবার নানা সময়ে তারা ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান নিয়ে অত্যন্ত গর্হিত মন্তব্য করে, যা স্পষ্টতই ধর্ম অবমাননার শামিল।
সম্প্রতি আলোচিত একজন বাউল শিল্পী আল্লাহ, নবী, ইসলাম নিয়ে এমন সব জঘন্য উক্তি করেছে, যেগুলো উচ্চারণ অযোগ্য। এখানে শুধু একটি উচ্চারণযোগ্য উদাহরণ দিচ্ছি। সুরা নাসের ভিতর প্রত্যেক আয়াতের শেষে ‘নাস’ শব্দটা উল্লেখ আছে। তিনি এই সুরার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, আল্লাহ কোরআনে বারবার নাচতে বলেছেন, নাউজুবিল্লাহ। তার এই বক্তব্যে যে কোনো ধার্মিক মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে বাধ্য। আরবি নাস আর বাংলা নাচ-এর তফাত যিনি জানেন না, ভক্তদের মাঝে তিনি কোরআনের তাফসির করেন।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে যা খুশি তা বলার সংস্কৃতি পৃথিবীর কোনো দেশেই গ্রহণযোগ্য না। শব্দ দ্বারা কাউকে উত্ত্যক্ত করা, উসকানি দেওয়া যে কোনো সভ্য দেশে দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ বাউলরা প্রতিনিয়ত তাদের নোংরা কথা ও কোরআনের উদ্ভট ব্যাখ্যা দ্বারা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে আহত করে চলেছে। তাদের গানের অধিকাংশ জায়গাজুড়ে থাকে ইসলাম বিকৃতি ও উসকানি। কিন্তু তাদের এই অপরাধের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। বরং তাদের উসকানির পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষের সংঘাত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে সংখ্যালঘুত্বের কারণে কিছু মিডিয়া বাউলদের প্রতি সহমর্মী হয়ে ওঠে। আর মিডিয়ার চোখে সংক্ষুব্ধ জনতা হয়ে ওঠে নিপীড়ক।
ইসলাম কাউকে আইন হাতে তুলে নেওয়ার কথা বলে না। বরং আইন হাতে তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান সুস্পষ্ট। কিন্তু কথা হলো, সময়মতো এই ধর্ম অবমাননাকারীদের আইনের আওতায় আনা হয় না কেন! প্রশাসন যদি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতো, যথাযথ ব্যবস্থা নিত, তাহলে আইন হাতে তুলে নেওয়ার মতো অপ্রীতিকর ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগই তৈরি হতো না। ইসলামে বৈরাগ্যবাদ, অপরিচ্ছন্নতা ও মাদকসেবনের কোনো স্থান নেই। ইসলাম নামাজের পর জীবিকার জন্য পৃথিবীতে ছড়িয়ে যেতে বলেছে। বাউলদের অপরিচ্ছন্ন পোশাক, কর্মহীন বৈরাগ্য জীবন যে কোনো অগ্রসর সমাজের জন্য বোঝা। তাদের প্রকাশ্য গঞ্জিকা সেবন দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপরও এ দেশের সুশীল সমাজ বাউলদের বুকের ভিতর আগলে রাখে।
আসুন, আমরা বাউলবাদের বিভ্রান্তিকর তত্ত্ব থেকে সতর্ক থাকি। পাশাপাশি দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে বাউলদের ধর্মবিরোধী যে কোনো বক্তব্যের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
জুমার মিম্বর থেকে
গ্রন্থনা: সাব্বির জাদিদ