একজন রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হলো রোগের ব্যাপারে সঠিক আকিদা ও বিশ্বাস পোষণ করা। রোগের ব্যাপারে কাউকে দোষারোপ না করা। মনে সর্বদা এই বিশ্বাস রাখা যে রোগ দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং সুস্থতা দানের মালিকও তিনিই। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোনো ওষুধ ও ডাক্তার রোগীকে সুস্থ করে তোলার ক্ষমতা রাখেন না।
ইবরাহিম (আ.)-এর ভাষায় কোরআনে এসেছে, ‘এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই (আল্লাহ) আমাকে রোগমুক্ত করেন।’
(সুরা : শুআরা, আয়াত : ৮০)
রোগের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। এমনকি সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগও আল্লাহর হুকুম ছাড়া সংক্রমিত হতে পারে না। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ছোঁয়াছে রোগ বা রোগের সংক্রমণ বলতে কিছু নেই, সফর মাসে কোনো কুলক্ষণ নেই এবং প্যাঁচার মধ্যেও কোনো কুলক্ষণ নেই।’ তখন একজন বেদুঈন জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে সেই উটপালের অবস্থা কী, যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং হরিণের মতো সুস্থ-সবল থাকে। অতঃপর সেখানে কোনো খুজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ওই রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে?’ (উত্তরে) তিনি বলেন, ‘তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিল!’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭০)
অর্থাৎ যে মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে রোগাক্রান্ত করেছিলেন, তিনিই তো অন্য উটকে আক্রান্ত করেছেন। তবে আল্লাহ কোনো রোগে সংক্রমিত হওয়ার গুণ দিয়ে থাকলে তা সংক্রমিত হবে। তখন তা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যেন অবশ্যই অসুস্থ উটকে সুস্থ উটের সঙ্গে না রাখে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭১)
রোগকে তাকদিরের অংশ মনে করা
ঈমানের দাবি হলো, জীবনে নেমে আসা সুখ-দুঃখ, প্রশান্তি-মুছিবত সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তাকদিরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করা। তদ্রূপ আমাদের রোগ-শোকও তাকদিরের লিখন। আমরা ছোট-বড় যে রোগেই আক্রান্ত হই না কেন, তা আমাদের শুধু জন্মের আগে নয়, রবং এই আকাশ-জমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে থেকে আমাদের তাকদিরে লিপিবদ্ধ ছিল। ইবনু আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও জমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে সৃষ্টিকুলের তাকদির লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৫৩)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া কিছুই আমাদের কাছে পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর ওপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।’
(সুরা : তাওবা, আয়াত : ৫১)
ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘আপতিত বিপদের কবল থেকে বাঁচার অন্যতম চিকিৎসা হচ্ছে, বান্দা এই দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে, যে বিপদে সে আক্রান্ত হয়েছে তা কখনোই তাকে ছাড়ার ছিল না। আর যেই বিপদে সে পড়েনি, তা আদতে তার তাকদিরে লিপিবদ্ধই ছিল না।’ (জাদুল মাআদ ৪/১৭৪)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন