সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কারিগরি ত্রুটির কারণে কাতারের আমিরের রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সময়মতো ঢাকায় পৌঁছাতে না পারায় গতকাল পূর্বনির্ধারিত সময়ে লন্ডন যেতে পারেননি তিনি। আজ কাতার সরকারের পক্ষ থেকে জার্মানির একটি বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর কথা রয়েছে। জর্জিয়ার তিবলিসি থেকে ঢাকায় আসবে এ বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি। তবে এখনো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নামার অনুমতি চাওয়া হয়নি। এটি ঢাকায় আসার পর আগামীকাল লন্ডনের উদ্দেশে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাত্রা করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি ফ্লাই করতে পারবেন কি না অথবা ফ্লাই করার মতো শারীরিক অবস্থা তাঁর আছে কি না-সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চিকিৎসকরা নিশ্চিত করলেই কেবল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উঠবেন বেগম খালেদা জিয়া।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, কারাগার থেকেই তাঁর রোগের সূচনা। চিকিৎসার অভাবে গুরুতর অসুস্থ হন তিনি। নেত্রীর সুস্থতা কামনায় মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার জন্যও অনুরোধ করেছেন তিনি।
এদিকে গতকাল সকালে লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছান খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। পরে সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং মেডিকেল বোর্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় চিকিৎসার যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহের পর ধানমন্ডিতে তাঁর মায়ের বাসায় যান। রাতে আবার খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে আসেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এবং আজকের মধ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় পৌঁছালে আগামীকালের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে যান্ত্রিক/কারিগরি ত্রুটির কারণে কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় না আসায় চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রার প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়। এখন কাতারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে অন্য একটি বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ ঢাকায় পৌঁছার কথা। ফলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে যায়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর সঙ্গে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সাতজন চিকিৎসকসহ ১৪ জন সহযাত্রী লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সেই সহযাত্রীর সংখ্যা কমানো হচ্ছে। তবে বাকিরা নিয়মিত যাত্রী ফ্লাইটে লন্ডন যাবেন।
খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরা (এসএসএফ) নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতার জটিলতা এখনো কাটেনি। তবে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নত ও সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে অ্যাডভান্স হেলথকেয়ার সেন্টারে নেওয়ার এখনই সময়। তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় দলের পক্ষ থেকে গতকাল বাদ জুমা সারা দেশে মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়ে পূর্বঘোষিত প্রার্থনা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
দুটি কারণে মূলত দেশনেত্রীর লন্ডন যাত্রার তারিখ পিছিয়েছে বলে জানা গেছে। কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটি এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কারণে তাঁর লন্ডন যাত্রা পেছানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালে বৈঠকে বসেন খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। এতে যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশ নেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে ভার্চুয়ালি কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে গতকাল কেউ ব্রিফিং করেননি। এর আগে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে বেশ কয়েকজন দেশীয় চিকিৎসক এবং বিদেশের দুজন চিকিৎসক থাকার কথা। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে যাতে যাত্রাপথে তাঁর কোনো ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে সুষ্ঠুভাবে উড়োজাহাজে চিকিৎসা দেওয়া যায়- সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়।
যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল তাঁকে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচনা করার পরই মেডিকেল বোর্ড বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার রাত থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটে। তবে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর খালেদা জিয়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে। লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে তাঁর ছেলে তারেক রহমান অভ্যর্থনা জানাবেন এবং সেখান থেকে তাঁকে সরাসরি লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না?’- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, ‘আমরা মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করছি না। মেডিকেল বোর্ড গতকাল তিনবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন। ফিজিক্যালি দেখেছেন উনাকে যুক্তরাজ্য ও চীনের ডাক্তাররা। এই মুহূর্তেও যুক্তরাজ্য ও চীনের ডাক্তারদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমরা আল্লাহর রহমতে আশাবাদী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঘুরে দাঁড়াবেন।’
জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসবে আজ : সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য কাতার আমিরের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসবে আজ। বিকাল ৫টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে জার্মান প্রাইভেট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কোম্পানি ‘এফএআই রেন্ট-এ জেট জিএমবিএইচ’ এর সিএল-৬০ (বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০০ সিরিজ) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি। এরপর খালেদা জিয়াকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঢাকাস্থ কাতার দূতাবাস।
এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল লন্ডনে নেওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স না পৌঁছানোয় যাত্রা স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে গতকাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। তবে সব ঠিক থাকলে আজ শনিবার এটি ঢাকায় পৌঁছাবে। তিনি বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা যাত্রার উপযোগী থাকলে এবং মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলে ইনশাল্লাহ আগামীকাল রবিবার লন্ডনে যাত্রা করবেন তিনি।