জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে নতুন নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। এরই অংশ হিসেবে এবার জাতীয় পার্টি একাংশের চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে নতুন নির্বাচনি জোট হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইসলামী মূল্যবোধ, উদার গণতন্ত্র ও সব ধর্মের সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে এ জোট হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি কাউন্সিল সম্পন্ন করে লাঙ্গল প্রতীক পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত লাঙ্গল প্রতীক না পেলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপির বাইসাইকেল নিয়েই ভোট করবে জাপা। তবে, লাঙ্গল প্রতীক পেলে জোটবদ্ধ দলগুলো লাঙ্গল প্রতীকেই ভোট করবে।
জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশের সঙ্গে নির্বাচনি জোট করতে যাচ্ছি। আশা করি শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জোট গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি জোট গঠনের ব্যাপারে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঘরোয়া আলোচনা করছি। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আগামীতে দেশে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতিকে বিকশিত করার জন্য এ জোট গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা জাতির সামনে নতুন রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারব।
প্রায় অভিন্ন মন্তব্য করেছেন পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেন, আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে জোটের রাজনীতি চলে আসছে। দেশের বড় দলগুলোকে জোট করে ভোট করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। আমরাও আমাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে জোট গঠন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ জোটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপির নেতৃত্বে সম্ভাব্য এ জোটে গত বছর ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর আত্মপ্রকাশ করা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ জোটে থাকতে পারে। এ ছাড়া চলতি বছর গত ৯ আগস্ট রাজধানীর গুলশানে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে সংহতি প্রকাশ করতে আসা রাজনৈতিক দলগুলোও নতুন এ রাজনৈতিক জোটে শরিক হতে পারে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোনো বড় দলই এককভাবে ভোট করছে না। সেই বিবেচনায় আমরাও জোটগতভাবে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জোটে জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় পার্টি ছাড়া অনেক দল থাকবে। তিনি বলেন, এ জোট হলো গণতন্ত্র রক্ষা, জনস্বার্থ সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সমমনা রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সমন্বয়। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের স্থিতিশীলতা, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা এবং একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। জাতীয় পার্টি মনে করে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাদের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এজন্যই যেসব দল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এবং জনকল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী আমরা তাদের সঙ্গে একত্রিত হচ্ছি। এটি ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের জোট নয়; এটি দেশের ভবিষ্যৎ, জনগণের আশা এবং মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে রক্ষা করার জোট।