উৎপাদন থেকে বিপণন-সব প্রক্রিয়ায় প্রাণিসম্পদ খাতের নীরব অবদান এখন জাতীয় প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এই উৎপাদন বজায় রাখা এবং নির্বিঘ্ন রাখতে পারাই বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আয়োজনে ‘জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ভিডিও শুভেচ্ছাবার্তায় ওই মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
ভিডিও শুভেচ্ছাবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বল্প পুঁজিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, বাণিজ্যিক খামার ও সহায়ক শিল্প গড়ে তোলা, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতি গঠনে প্রাণিজ আমিষ জোগানে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে প্রাণিসম্পদ খাত এখন প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের ফলে দেশে ডিম, দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যা নাগরিকদের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাণিজাত খাদ্যের অপ্রতুলতা, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স, প্রাণিজ উপজাত ব্যবহার, মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে পরস্পর সংক্রমণযোগ্য রোগগুলো দমন, ইমারজিং ও রিইমারজিং রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বর্তমান সময়ে প্রাণিসম্পদ খাতের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাই গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্র্বর্তী সরকার এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সপ্তাহব্যাপী এই উদ্যোগ সরকারের প্রচেষ্টাকে আরও বেগবান করবে। পাশাপাশি গবাদি পশু পালনে নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রান্তিক খামারিদের মাঝে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করবে, যা দেশের সর্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, দুধ, ডিম ও মাংসের দাম সামান্য বাড়লে নানান ধরনের কথা শোনা যায়, কিন্তু এসব উৎপাদনে জড়িত মানুষের গল্প খুব কমই সামনে আসে। দুধের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়, অথচ প্রান্তিক চাষি ও খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহের মাধ্যমে সেই নির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খামারের খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বড় খামারিরা অনেক সময় পশুকে এমন খাদ্য দেন যা শুধু পশুর জন্য নয়, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাণীরা মানুষের ভালোবাসা পায়, নিষ্ঠুরতা নয়- এটিই হওয়া উচিত মূল নীতি। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা যাবে না। কোনো প্রাণীর প্রতি যদি কেউ নিষ্ঠুর আচরণ করে তাহলে তাদেরকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।