গণভোট অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিশেষ বৈঠকে অধ্যাদেশটি অনুমোদিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট। জাতীয় নির্বাচনে ব্যালট পেপার হবে সাদা কাগজে কালো প্রিন্ট, গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন কাগজের। ভোট গণনা চলবে একই সঙ্গে। পোস্টাল ব্যালটেও দেওয়া যাবে গণভোট। বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গণভোট অধ্যাদেশের বিস্তারিত তুলে ধরেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের পর ‘গণভোট অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। গতকাল রাতে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে অধ্যাদেশের গেজেট জারি করা হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের মতামত জানতে একটা আইন করেছি। গণভোট কীভাবে হবে তার বিস্তারিত নিয়ে গণভোট অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। গতকাল অধ্যাদেশটি উপদেষ্টা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছে। তিনি বলেন, চারটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে গণভোটে মূলত একটিই প্রশ্ন থাকবে। সেখানে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিতে হবে। চারটি প্রস্তাব তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, চারটি প্রস্তাবের মধ্যে একটি হলো সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচনসহ জুলাই সনদে যে ৩০টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হয়েছে, সেই প্রস্তাবগুলো জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। আমরা ওই ৩০টি প্রস্তাব গণভোট অধ্যাদেশের এপেন্ডিক্সে যুক্ত করে দিচ্ছি। এ ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল চাওয়ায় গণভোটের প্রস্তাবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়টা রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা রাজনৈতিক দলের সবকিছু যেমন সবার ভালো লাগে না, তেমনি চারটি প্রশ্নের ভিতরে কোনোটি নিয়ে কোনো কোনো ভোটারের আপত্তি থাকতে পারে। সার্বিক বিবেচনায় যদি ভালো মনে হয়, ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন, অন্যথায় ‘না’ ভোট দেবেন। এটা ভোটারের স্বাধীনতা।
অধ্যাদেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধানের প্রসঙ্গ টেনে আইন উপদেষ্টা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রগুলোতেই গণভোট হবে। সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকাই হবে গণভোটের ভোটার তালিকা। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই সময়ে গণভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনের তফসিলও হবে একই দিনে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ব্যালট পেপার আলাদা ও ভিন্ন রঙের হবে। ইসি কর্তৃক নির্ধারিত রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাররাই গণভোটে দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো কারণে প্রিসাইডিং অফিসার যদি মনে করেন কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা যাচ্ছে না, তাহলে তিনি ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে পারবেন। ইসি যদি দেখেন অন্যান্য কেন্দ্রের ফলাফল দিয়ে গণভোটের ফলাফল নির্ধারণ করা যাচ্ছে না, তাহলেই শুধু কমিশন ওইসব কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দেবেন। একই সিলমোহর দিয়ে গণভোট প্রদান করতে হবে। প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও যারা নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করবেন তারা পোস্টাল ব্যালটে জাতীয় নির্বাচনে ও গণভোটে ভোট দিতে পারবেন। ইতোমধ্যে ৩১ হাজার ৮০১ জন প্রবাসী পোস্টাল ব্যালটের জন্য নিবন্ধন করেছেন। আশা করছি এই সংখ্যা কয়েক লাখ হবে। তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ, শৃঙ্খলা রক্ষা, বাতিল ব্যালট পেপার- সব বিষয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধি কার্যকর হবে। ভোট গণনাও হবে একই পদ্ধতিতে। গণভোট ভালোভাবে আয়োজন করতে ইসিকে যে কোনো বিধি, নির্দেশাবলি ও পরিপত্র প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে অধ্যাদেশে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছেন। ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার আশা রয়েছে। ভোট আয়োজনে সিল, কালি, গালাসহ সব প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পর্যাপ্ত মজুত আছে, যা আগেই ১০টি জোনাল অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনে ব্যালট পেপার হবে সাদা কাগজে কালো প্রিন্ট, গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন কাগজের। বর্তমানে দেশের বাইরে পোস্টাল ব্যালটের নিবন্ধন চলছে। পরে দেশের ভিতরে নিবন্ধন শুরু হবে। দুটা ব্যালট পেপারই একই খামে পাঠানো হবে। গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ভারতের প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার বিষয়টি ইসি দেখবে। তবে মনে হয় না তারা নিবন্ধন করবেন। এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করছি না। প্রতিটা মানুষ যাতে বুঝতে পারে এজন্য আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে গণভোটের বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হবে। ভোটারদের সুবিধার্থে গণভোটের ব্যালটে টিক চিহ্ন ও ক্রস চিহ্ন থাকবে। ইসি সচিব বলেন, পোস্টাল ব্যালটের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া সর্বজনীন। ভারতে যারা বৈধভাবে বসবাস করছেন তারা নিবন্ধন করে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।