ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা মুদ্রণের কাজ শেষ হবে। আজ সংলাপ হচ্ছে দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে। নির্বাচন সামনে রেখে গত মাসে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে ইসি, যা আজ ২৫ নভেম্বর শেষ হচ্ছে। এরপর ২৭ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বৈঠক এবং ৩০ নভেম্বর আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে সংসদ ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তবে তফসিল ঘোষণার আগেই রাষ্ট্রপতি না কি সরকারপ্রধানের সঙ্গে ইসি সাক্ষাৎ করবে সেই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন একই দিনে ভোট করবে। দুটো ব্যালট হবে এবং ভিন্ন রঙের হবে। গণভোট অধ্যাদেশ হাতে না পেলে এসব বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরবে ইসি।
এদিকে রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তারিখ ধরে প্রায় ৬০ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলেও ইসির হিসাবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হতে পারে তফসিল ঘোষণা। তবে গণভোটের প্রস্তুতির কারণে তফসিল ঘোষণা কয়েকদিন পিছেয়েও যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোও তফসিলের তারিখ জানাতে তাগাদা দিয়ে আসছে।
অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন দ্বিতীয়বার বসছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সমন্বয় নিয়ে। সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রস্তুতির মধ্যে গণভোটের অধ্যাদেশের জন্যও অপেক্ষায় রয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে এই গণভোটের জন্য তিন-চার দিনের মধ্যে আইন করে ফেলার কথা বৃহস্পতিবার তুলে ধরেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। নির্বাচন সামনে রেখে আরেক দফা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এ মাসের শেষে নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন পরিকল্পনা ও মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ের কাজ সেরে প্রথাগত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে কমিশন। এরপর তফসিল নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
সংলাপ শেষ করে গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে অন্য কমিশনার, ইসি সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একটা বৈঠক হয়েছে। এ বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে একজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে ‘আইনশৃঙ্খলা কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেল’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এ সেল নির্বাচন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপতথ্য, মিথ্যা তথ্য, গুজব, এআইয়ের অপব্যবহার, ভুয়া খবর, অপপ্রচার রোধে ব্যবস্থা নেবে এবং সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে সঠিক তথ্য সরবরাহে দ্রুত উদ্যোগ নেবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরশেন, এআই ক্রিয়েটেডে অপপ্রচার-এসব নিয়ে আমাদের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা লেভেলে যেন কো-অর্ডিনেশন করতে পারি। আইনশৃঙ্খলার বিষয় রয়েছে। একটা সেল হবে, যেখান থেকে ম্যানেজ করা হবে। কো-অর্ডিনেশন করা হবে-প্রস্তুতিমূলক আলোচনা।
সবশেষ ২০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা সভা হয়েছে এবং আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ এসেছে, যা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্তমূলক নির্দেশনা দেবে আগামীর বৈঠকে। এ ব্যাপারে ইসি সচিব বলেন, আরও দুটো বৈঠক হবে। আগের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেবে ইসি।
নির্বাচন পরিচালনা শাখা এবং জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ২৭ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনামূলক বৈঠক করবেন সিইসি।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ বাহিনী প্রধান ও সংস্থা, বিভাগের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ৩০ নভেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়োগ, পরিকল্পনা, সমন্বয় ও দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা করার সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগের প্রধানদের নিয়ে এ বৈঠক হবে। এ দুই সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারের তরফ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সুনির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে দেবে তফসিলে। ভোট নিয়ে ‘শঙ্কা’ কাটাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে তফসিল ঘোষণার দাবিও উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা ও আন্তমন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত বৈঠকের পর সেটি জানানোর সম্ভাবনা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ দুটি সভার অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ডিসেম্বরে কোন তারিখে তফসিল ঘোষণা করবেন তা ঠিক করবেন সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, তফসিলের প্রস্তুতির বিষয়টি হচ্ছে, গণভোট হতে গেলে আইন হতে হয়। নির্বাচন কমিশনের কাছে আইনের মাধ্যমে এখতিয়ারটা আসতে হয়। আমরা গণভোটের আইনের অপেক্ষায় রয়েছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে তফসিলের সময়টায় (তফসিল থেকে ভোটের তারিখ) দুই মাসের গ্যাপ রাখা।