দেশের রাজনীতিতে নতুন এক সমীকরণ তৈরি হতে যাচ্ছে। আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে গঠিত হতে পারে তৃতীয় ধারার নতুন রাজনৈতিক জোট। আগামী বৃহস্পতিবার এ জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দুই দলের শীর্ষনেতাদের বক্তব্যেও মিলেছে জোট গঠনের প্রস্তুতির স্পষ্ট ইঙ্গিত।
সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গঠনের আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। ঠিক এমন সময় এবি পার্টি ও এনসিপির এই উদ্যোগকে অনেকেই দেখছেন একটি সম্ভাব্য তৃতীয় শক্তি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে। এ প্রসঙ্গে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমাদের একটা জোট হওয়ার কথা রয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই আমরা ঘোষণা করব।’ তিনি বলেন, ‘এখন বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে।’ আরও কোনো দল জোটে যুক্ত হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আলাপ-আলোচনা চলছে। এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। সময় হলেই জানা যাবে।’
গত রবিবার ফেনীতে এক অনুষ্ঠানে এবি পার্টি ও এনসিপির জোট গঠনের ঘোষণা দেন মজিবুর রহমান মঞ্জু। তাঁর এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় ওঠে। বিশেষ করে তৃতীয় শক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দীর্ঘদিনের আলোচনার পর এবি পার্টি ও এনসিপির সমন্বয়কে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অনেক ভোটারের মধ্যেই একটি নতুন রাজনৈতিক বিকল্পের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন জোটের আবির্ভাব রাজনৈতিক স্থবিরতার মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
অন্যদিকে এনসিপির পক্ষ থেকেও আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যারা তৃতীয় ধারার জোট করতে চান এমন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। এটা নিয়ে এবি পার্টির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এখনো দৃশ্যমান কিছু হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেই গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’ তিনি আরও জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। মানুষ নতুন নেতৃত্ব চায়, ভিন্ন রাজনৈতিক আচরণ চায়। সেই চাহিদা সামনে রেখে তৃতীয় ধারার একটি সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছেন তারা। দুই দলের নেতাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে জোট গঠনের বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যদিও কোন কোন দল এতে যুক্ত হতে পারে তা নিয়ে এখনো রহস্য থেকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃতীয় ধারার জোট গঠনের ঘোষণা এলে প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। তবে জোটটি কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, তা নির্ভর করবে তাদের কর্মসূচি, সাংগঠনিক শক্তি এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতার ওপর। এখন নজর বৃহস্পতিবারের দিকে। সেদিনই জানা যাবে এবি পার্টি ও এনসিপির নেতৃত্বে ঘোষিত এই নতুন জোট আসলে কী রূপে আত্মপ্রকাশ করছে, কতটা বিস্তৃত হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন এটি কী সত্যিই একটি কার্যকর তৃতীয় শক্তি হয়ে উঠবে, নাকি কেবল আরেকটি ছোট জোটের জন্ম হবে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে তৃতীয় ধারার জোট গঠনের উদ্যোগ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে নতুন আলোচনার দ্বার উন্মোচন করছে।