পাকিস্তানি অভিনেত্রী মাহিরা খান। সিনেমায় গ্ল্যামার ও সাবলীলভাবে পর্দায় উপস্থিতির জন্য বেশ প্রশংসিত তিনি। পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে।
কিন্তু প্রতিবারই সব প্রতিকূলতা সামলে নিয়েছেন তিনি। শাহরুখ খান অভিনীত ‘রইস’ সিনেমা দিয়ে ২০১৭ সালে বলিউডে অভিষেক হয় তার। এই সিনেমা দিয়ে ভারতে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তবে তার সাফল্যের পেছনে ছিল এমন একটি বিষাদের গল্প। যা সম্পর্কে তিনি খুব কমই কথা বলেছেন। বলিউড এমন একটি ইন্ডাস্ট্রি, যেখানে কাজ করার স্বপ্ন অনেক অভিনয়শিল্পীই দেখেন। সেই স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল মাহিরার।
সম্প্রীতি এক সাক্ষাৎকারে তেমন অভিজ্ঞতার কথা ভক্তদের জন্য শেয়ার করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের উরি শহরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডের সদর দপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ১৯ ভারতীয় সেনা নিহত হন এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হন।
এ হামলার জেরে পাকিস্তানি অভিনয়শিল্পীদের ভারতে কাজ করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে বিপাকে পড়েন মাহিরা খান। মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে শুরু করেন তিনি। যার জন্য এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
এই অভিনেত্রী বলেন, ভারত সরকারের কড়াকড়ির পর মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন তিনি। তিনি বলেন, আমি (রইস) সিনেমাটি সবে শেষ করেছি এবং সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তারপর হঠাৎ এই আক্রমণ (উরির ঘটনা) ঘটে। রাজনৈতিকভাবে, সবকিছু গোলমাল হয়ে যায়। ভারতের সঙ্গে, এটি সর্বদা রাজনৈতিক। কিন্তু এটি নিয়ে এত গোলমাল হতে পারে, তার আমার ধারণার বাইরে ছিল।
তিনি আরও বলেন, শুরুতে আমি ভয় পাইনি। কিন্তু আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ক্রমাগত টুইট করা হচ্ছিল। একটা পর্যায়ে আমি ফোন ধরতে ভয় পেতাম, এটা খুবই ভয়ংকর ছিল। একটা বিষয় আমাকে কষ্ট দিচ্ছিল, আমি এটির (রইস) প্রচারের জন্য ভারতে যেতে পারব না। তবে আশা করেছি, এটি আমার দেশে মুক্তি পাবে। কারণ আমি জানতাম আমাদের দেশের (পাকিস্তান) দর্শকরা এটি দেখতে ভিড় করবে, কারণ সে (শাহরুখ খান) এখানে (পাকিস্তান) খুবই জনপ্রিয়।
মাহিরা আরও বলেন, ওই ঘটনা আমার ভেতরে লুকিয়ে থাকা উদ্বেগ এবং বিষণ্নতাকে ক্রমেই বাড়িয়ে দিচ্ছিল। সে সময়টা আমার জন্য কঠিন ছিল। আমি আক্রমণের শিকার হব, এমনটাই মনে হচ্ছিল সবসময়। এটা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, আমি ক্রমশই হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। বিষণ্নতা গ্রাস করছিল আমাকে।’
একপর্যায়ে মাহিরাকে চিকিৎসাও নিতে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সেই প্রথমবার আমি থেরাপির জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি, কারণ আমি বেশ কয়েকজন থেরাপিস্টের কাছে গিয়েছিলাম। যদিও আমি খুব ভাগ্যবান ছিলাম, কারণ আমার পরিবার এবং বন্ধুরা আমাকে সমর্থন করেছিল।
সেই অসুস্থতা এখনো অভিনেত্রীকে ছাড়েনি। এখনো তিনি নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানিয়েছেন, অসুস্থতা তাকে এতটাই গ্রাস করেছিল যে, বিছানা থেকেও দিনকয়েক উঠতে পারেননি অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘গত বছর, আমি বিছানায় ছিলাম। আমার খুব ভালো করে মনে আছে, আমি বাথরুমে যাওয়ার জন্য বিছানা থেকে উঠতেও পারিনি।
অভিনেত্রী এ ধরনের রোগীদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন বাস্তব, ঠিক অন্য যে পকোনো শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার মতো। আমাদের এটিকে সময়মতো সঠিকভাবে চিকিৎসা করা উচিত।
বিডি প্রতিদিন/কামাল