দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সিংড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ধ্বংসপ্রায়, পরিত্যক্ত এবং জনমানবশূন্য ভবনে পরিণত হয়েছে। জনবল ও বরাদ্দসংকট, নজরদারির অভাব, দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে একসময় এ এলাকার মানুষের মাতৃস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার অন্যতম ভরসাস্থল স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির এ অবস্থা বলছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা। এতে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এ এলাকার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, রাত নামলেই ভবনটি মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়, যা এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে দেখা যায়, এর ভবনের দরজা ও জানালা ভেঙে পড়েছে বা চুরি হয়েছে। ফ্রেম, কাঠ ও লোহার বেশির ভাগ অংশ নেই। ভাঙা দেয়ালে বড় বড় ফাটল, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ইট বেরিয়ে গেছে। ভবনের চারপাশে আগাছায় জঙ্গল এমনভাবে হয়েছে যে দূর থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত ভূতুড়ে স্থাপনা মনে হয়।
ভবনে প্রবেশ করলে দেখা যায়, মেঝেজুড়ে প্লাস্টিক, ছেঁড়া কাগজ, ভাঙা কাচ, পশুর বিষ্ঠা, শুকনো পাতা এবং দীর্ঘদিনের জমে থাকা ময়লার আস্তরণ। চেয়ার, টেবিল বা চিকিৎসার সরঞ্জাম নেই। টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী, পানির লাইন নষ্ট, নেই আলো বা নিরাপত্তাব্যবস্থা।
স্থানীয় রাবেয়া খাতুন বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু থাকলে গর্ভবতী মা, শিশুর চিকিৎসা আর পরিবার পরিকল্পনা সেবা হাতের নাগালেই পেতাম। রানীগঞ্জ সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মনোরঞ্জন মোহন্ত ভুট্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিংড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থা একেবারেই বেহাল। স্থানীয়দের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব এখানে পুনরায় স্বাস্থ্যসেবা চালু করতে হবে। এই কেন্দ্র সচল হলে, গর্ভবতী মা, শিশু স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, টিকাদান, সাধারণ প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা এ অঞ্চলে সহজে পাওয়া যাবে। ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা বহুবার উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে এটি সংস্কারের আবেদন করেছি। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। ভবনটি এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ।
ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান মেহেদী হাসান বলেন, কেন্দ্রটির জরাজীর্ণ অবস্থার ব্যাপারে অবগত। এ ধরনের সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের কাজ মূলত হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের (এইচইডি) মাধ্যমে হয়ে থাকে। বরাদ্দ অনুমোদন ও জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।