ঢাকা থেকে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও বুড়িমারী রুটে চলাচলকারী চারটি আন্তনগর ট্রেনে তীব্র কোচসংকট দেখা দিয়েছে। এ রুটগুলোয় যাত্রী বেড়েছে। সেই হিসাবে প্রতিটি আন্তনগর ট্রেনে কোচ চাহিদা কমপক্ষে ২০ থেকে ২২টি। সেখানে কোচ রয়েছে ১২টি, বলছেন রেলসংশ্লিষ্টরা। ফলে অতিরিক্ত ট্রেনযাত্রীদের চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে নিয়মিত ট্রেনযাত্রীদের অনেককেই দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ ছাড়া সিডিউল বিপর্যয় ঠেকাতে এসব ট্রেনের জন্য অতিরিক্ত ক্যারেজও সংযোজন করা হয়নি।
যাত্রীরা বলছেন, সময়মতো ট্রেন ছাড়তে না পারা, মাঝপথে দীর্ঘ অপেক্ষা এবং গন্তব্যে দেরিতে পৌঁছানো এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনেক সময় ১ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত সিডিউল বিপর্যয়ের শিকার হন যাত্রীরা।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের বিভাগীয় যান্ত্রিক পরিবহন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঢাকা রুটে লালমনিরহাট থেকে ‘লালমনি এক্সপ্রেস,’ রংপুর থেকে ‘রংপুর এক্সপ্রেস,’ কুড়িগ্রাম থেকে ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ চলাচল করে। প্রতিটি আন্তনগর ট্রেনে কোচ রয়েছে মাত্র ১২টি। যেখানে চাহিদা কমপক্ষে ২০ থেকে ২২টি কোচ। বর্তমানে ১২টি কোচে আসন সংখ্যা ৫৫৬টি। অতিরিক্ত ট্রেনযাত্রীদের চাপ সামলাতে এত কম কোচ পর্যাপ্ত নয়। আমরা চেষ্টা করছি এ রুটে ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না।
রংপুর রেল স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ট্রেনে চাহিদামতো আসন নেই। কোচ কম থাকায় অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। কেউ স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটেন, আবার অনেকে কোনোভাবে ট্রেনে উঠে পড়েন। কোচ বাড়ানো হলে রেলওয়ে লাভবান হবে, যাত্রীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন।
কুড়িগ্রাম স্টেশনের যাত্রী কাপড় ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী বলেন, মাঝে মাঝে টিকিটই পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটতে হয়। ঢাকা রুটে কোচ বাড়ানো ছাড়া যাত্রী ভোগান্তি কমবে না।
লালমনিরহাট থেকে ঢাকাগামী কলেজ শিক্ষক সহিদুল হক জানান, লালমনি এক্সপ্রেস ও বুড়িমারী এক্সপ্রেসের সিডিউল প্রায়ই বিপর্যয় হয়। ১ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হয়। একটি বাড়তি ক্যারেজ থাকলে ভোগান্তি অনেকটাই কমে যেত।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, সরকার নতুন কোচ আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছে। রংপুর অঞ্চলের চারটি আন্তনগর ট্রেনে চাইলে এখনই কোচ সংখ্যা বাড়ানো এবং একটি বাড়তি ক্যারেজ সংযোজন করা সম্ভব। এতে সিডিউল বিপর্যয় কমবে এবং যাত্রীদের দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে হবে না। রেলওয়ে ও যাত্রী-দুই পক্ষই লাভবান হবে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী শেখ আসিফ আহমাদ বলেন, ‘ঢাকা রুটে চলাচলকারী চারটি আন্তনগর ট্রেনের প্রতিটিতে ৪-৫টি কোচ এবং সময়সূচি ঠিক রাখতে একটি অতিরিক্ত ক্যারেজ সংযোজনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিদেশ থেকে নতুন কোচ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। তবে নতুন কোচ না পেলেও পুরোনো কোচ পাওয়া গেলে আপাতত সমস্যার সমাধান হবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি।’