ফরিদপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে জুতার আঠা, ফিটকিরি, নিম্নমানের চিটাগুড়, নিষিদ্ধ হাইড্রোজ, ক্ষতিকর রং, সোডাসহ নানান বিষাক্ত উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল খেজুর ও আখের গুড়। এসব বিষাক্ত গুড় ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর
ফরিদপুর : ফরিদপুরে জুতার আঠা, ফিটকিরি, নিম্নমানের চিটাগুড় (গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত), নিষিদ্ধ হাইড্রোজ, নন-ফুডগ্রেড ক্ষতিকর রং ও ফ্লেভার, পচা মিষ্টি. মিষ্টির নষ্ট গাদ, ময়দা, সোডাসহ নানান বিষাক্ত উপাদান দিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল মণকে মণ ভেজাল খেজুর ও আখের গুড়। এসব বিষাক্ত গুড় ছড়িয়ে পড়ছিল ফরিদপুরসহ সারা দেশে। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী চক্রটি এ ভেজাল গুড় তৈরি করলেও রহস্যপূর্ণ কারণে ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে কারখানায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৬ হাজার কেজি ভেজাল গুড়, সরঞ্জাম ও উপকরণ জব্দ করেছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানায়, শহরতলির মাচ্চর ইউনিয়নের শিবরামপুরের ছোট বটতলা নামক স্থানে স্বপন কুমার শীল নামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি গড়ে তোলেন ভেজাল গুড়ের বিশাল কারখানা। রাতের আঁধারে ট্রাকে আনা হতো ভারতীয় নিম্নমানের চিটাগুড়। নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাতদিন চলত ভেজাল গুড় উৎপাদন। প্রতিদিন টনকে টন গুড় উৎপাদন হতো। এসব গুড় ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। অপকর্ম লুকাতে এ কারখানার চারদিকে তৈরি করা হয়েছে টিনের উঁচু বেড়া। পাহারায় লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানাটিতে ভেজাল গুড় উৎপাদন করা হলেও প্রশাসনের কেউ এসে দেখেনি। কারখানার মালিক স্বপন কুমার শীল প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে এ অপকর্মটি করে আসছিলেন। স্থানীয়দের কখনো ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। সিসি ক্যামেরা দিয়ে সব সময় নজরদারি করা হতো। সম্প্রতি ভেজাল গুড় তৈরি হচ্ছে এমন অভিযোগের দাবি জোরালো হয়। মঙ্গলবার সহকারী কমিশনার মো. আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কারখানাটিতে অভিযান পরিচালনা করেন। সেখান থেকে সাড়ে ৬ হাজার কেজি ভেজাল গুড়, গুড় তৈরির উপকরণ ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। পরে জব্দ ভেজাল গুড় ধ্বংস করা হয়। কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। তবে আগেই খবর পেয়ে কারখানার মালিক স্বপন কুমার শীল ও কর্মচারীরা পালিয়ে যান।
রাজশাহী : রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে কোনো ধরনের রস ছাড়াই চিনি ও কাপড়ে দেওয়া রং, আটা ও চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছিল আখ ও খেজুরের গুড়! ২৬ নভেম্বর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার শাহাপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ চিনি ও ভেজাল গুড় জব্দ করে র্যাবের সদস্যরা। কারখানার দুই মালিক লাকি ও সান্টুর ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা জরিমানাও করেন উপপরিচালক ইব্রাহিম হোসেন। নানটু মিয়া নামে ওই এলাকার এক গুড় প্রস্তুতকারীর স্ত্রী মোসা. লাকি অকপটে স্বীকার করেন, তাদের তৈরি গুড়ে কোনো ধরনের রসের ব্যবহার ছিল না। শুধু চিনি দিয়ে আখ ও খেজুরের গুড় তৈরি করা হচ্ছিল। এগুলোতে মেশানো হতো কাপড়ের রং, আটা, হাইড্রোজ, গ্যাস পাউডার, চুন ও চিনি।
এরপর এগুলো রাজশাহী, নাটোর ও পাবনার বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে র্যাব-৫-এর উপঅধিনায়ক মেজর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে যে গুড়গুলো আছে সেখানে আখ বা খেজুরের রসের কোনো উপস্থিতি নেই। সবগুলো চিনি ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি। কারখানাগুলোয় প্রায় এক টনের মতো গুড় পাওয়া গেছে। এগুলো নষ্ট করা হয়েছে।