উত্তরের কৃষিভান্ডারখ্যাত জয়পুরহাটে আলু রোপণ মৌসুমের শুরুতেই কৃত্রিম সারসংকটের অভিযোগ করেছেন কৃষক। তাঁরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে মিলছে না সার। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারের দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এর সঙ্গে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে প্যাকেটজাত জৈব সারও।
কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের সবুর মিয়া বলেন, ‘এবার ৫ বিঘা জমিতে আলু ও সরিষা চাষ করেছি। কিন্তু চাহিদামতো টিএসপি আর ডিএপি (ড্যাপ) পাচ্ছি না। দোকানে গেলে বলে সরবরাহ নেই। অথচ নিজ চোখেই দেখি গোপনে অনেকেই বেশি দাম দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’ ক্ষেতলাল উপজেলার ভাষিলা গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘সারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়। আলুবীজ অতিরিক্ত অঙ্কুরিত হওয়ার ফলে লাগানোর উপযোগী হয়েছে। কিছু আলুবীজে পচনও শুরু হয়েছে। সার না পেলে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’ পাঁচবিবি উপজেলার হাঁটুভাঙা গ্রামের কৃষক ফজর আলী বলেন, ‘সারের জন্য ডিলারের ঘরে গেলে তিনি কৃষি কার্ডে কৃষি কর্মকর্তার সুপারিশ নিয়ে আসতে বলেন। সুপারিশ নিয়ে গেলেও সার মেলেনি।’ আক্কেলপুর উপজেলার মাতাপুর গ্রামের আসলাম হোসেন বলেন, ‘গত বছর আলুর ফলন ভালো হলেও কাক্সিক্ষত দাম পাইনি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম আলু চাষ করেছিলাম। কিন্তু কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ। এখন চাহিদামতো সার না পাওয়ায় খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’
কৃষক বলছেন, ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। আবার এর সঙ্গে প্যাকেটজাত জৈব সার দস্তা, বোরনও কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে না বিক্রয় রসিদও। দাম বেশি নেওয়ায় আলুর উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাধ্য হচ্ছেন তারা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক নয়ন হোসেন বলেন, ‘আলু রোপণে প্রতি বিঘা জমিতে সার দিতে হয় ৩ বস্তা, সেখানে সার পাচ্ছি মাত্র ১ বস্তা। এ ছাড়া ৫০ কেজির এক বস্তা সার ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে ডিলার বা সাব ডিলারদের কাছ থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছি।’
জেলা সার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রওনকুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘সরকার যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়, তা দিয়েই আমাদের চলতে হয়। কৃষকের চাহিদা বেড়ে গেলেও আমাদের হাতে তো অতিরিক্ত সার থাকে না। এমনকি এলাকাভিত্তিক বরাদ্দ করা এক ওয়ার্ডের সার অন্য ওয়ার্ডের কৃষককে দিতে পারি না। কৃষকের জমির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বরাদ্দ সার বিতরণ করছি।’
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক কৃষক নির্ধারিত জমির তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ সার চাইছেন, যা বাস্তবসম্মত নয়।
অতিরিক্ত সারপ্রয়োগে ফসল উৎপাদন সাময়িক ভালো হলেও কয়েক বছর পর ওই জমিগুলো পূর্ণমাত্রায় উর্বরা শক্তি হারিয়ে ফেলবে। কিছু কৃষক না বুঝেই জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করছেন। তবে এ বিষয়ে আমরা কৃষকের মাঝে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালাচ্ছি।’