করতোয়া আর চাওয়াই নদীবেষ্টিত ছোট্ট দ্বীপ। নাম রাজারপাট ডাঙ্গা। পরিবার-পরিজন নিয়ে এ গ্রামে বাস করেন ভূমিহীন ছিন্নমূল মানুষ। এ গ্রামের অধিবাসীরা কৃষি, হোটেল বা পাথরশ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বেশির ভাগ নারী অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। পঞ্চগড় সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাজারপাট ডাঙ্গা নামে এ গুচ্ছ গ্রামে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সহস্রাধিক মানুষ। গত ২৫ বছরে কেউ খোঁজ নেয়নি তাদের। জানা গেছে, ২০০০ সালে তৎকালীন বিএনপির শাসনামলে প্রায় ৫৩ একর খাস জমিতে গড়ে তোলা হয় এ গুচ্ছগ্রাম। দেড় শতাধিক ভূমিহীন পরিবারকে ৫ শতক করে কৃষি জমি ও একটি করে টিনের চালা ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় তখন। কিন্তু সরকার বদলের পর এই গ্রামের দিকে আর ফিরে তাকায়নি কেউই। ২৫ বছর আগের টিনের চালা এখন বসবাস অযোগ্য। অধিকাংশ ঘরই ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। বাধ্য হয়ে প্লাস্টিক মুড়িয়ে বসবাস করতে হচ্ছে অধিবাসীদের। ২৫ বছরে বেড়েছে মানুষের সংখ্যাও। স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে এখনো উন্মুক্তভাবেই পয়োনিষ্কাশন করতে হচ্ছে তাদের। দু-একটি টিউবওয়েল থাকলেও ঠিকমতো পানি উত্তোলন সম্ভব হয় না। একমাত্র স্কুল ঘরটিও ভেঙে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। এখান থেকে শহর বা হাটবাজারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রয়েছে করোতোয়া নদীতে একটি কাঠের সেতু। নদী পার হয়ে ৩-৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শিশুদের যেতে হয় স্কুলে। শিশুরা ভুগছে পুষ্টিহীনতায়।
গ্রামের অধিবাসীরা বলছেন, তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে ভিডিও ধারণ করে নিয়ে যায়, কোনো কাজ হয় না। কয়েক বছর ধরে অফিসে অফিসে যোগাযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি। সারা দিন কাজ সেরে একটু শান্তির ঘুমও হয় না তাদের। ঘূর্ণিঝড়ে আর বর্ষাকালে ভয় এবং আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের। এ গ্রামের সহজ-সরল অধিবাসীদের দাবি- তাদের নতুন ঘর দিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই করে দেওয়া হোক।
এখানকার অধিবাসীরা বলছেন, বিএনপি শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ গুচ্ছ গ্রামে আর কোনো উন্নয়ন হয়নি।
তবে প্রশাসন বলছে- এ গ্রামের উন্নয়নের জন্য বহুবার ওপরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি রাজস্ব বিভাগে বিষয়টি তোলা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে চিঠি। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন বলেন, রাজারপাট ডাঙ্গা গুচ্ছ গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা এ গ্রামের উন্নয়নের জন্য অনেকবার ওপরে আবেদন করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কোনো সাড়া পাইনি। এবারও চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে নিশ্চই কাজ হবে।