রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) গত অর্থবছরে ১৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে। অভিযোগ আছে, উত্তরের এই বিশেষায়িত ব্যাংকটির লোকসান কেবল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াহিদা বেগমের অদক্ষতা, অনিয়ম ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেই। পরিচালনা পর্ষদকে পাশ কাটিয়ে নিজের খেয়ালখুশিমতো ব্যাংক চালানোর অভিযোগ আছে এমডির বিরুদ্ধে। আর তাতে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে রাকাবে। এ ঘটনায় এমডিকে কৈফিয়ত তলব করেছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। জানা যায়, গত ৯ মার্চ রাকাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পান আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত ওয়াহিদা বেগম। যোগদানের নয় মাস শেষ হলেও রাকাবের উন্নয়নে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি তিনি। উল্টো দায়িত্ব নেওয়ার পর চেয়ারম্যান-পরিচালকদের পাশ কাটিয়ে খেয়ালখুশিমতো ব্যাংক চালাতে শুরু করেন।
এমডির এ কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ পরিচালনা পর্ষদ। ৩ ও ১২ নভেম্বর দুই দফা এমডিকে কৈফিয়ত তলব করেছেন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলী। কিন্তু সেই কৈফিয়তের জবাবই দেননি এমডি। অভিযোগ উঠেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ আউটসোর্সিং কোম্পানির সঙ্গে গোপন আঁতাত করে ৭২১ জন নিরাপত্তাপ্রহরী ও অফিস সহায়কের বেতনভাতা বাবদ ব্যয় ও কমিশনের ১০ কোটি ২৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এমডি। চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলীর অভিযোগ, এমডির এ আচরণ চরম রহস্যজনক। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তিনি বৈধ বিল পরিশোধে কালক্ষেপণ করছেন। পদোন্নতি পেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি ওয়াহিদা বেগম রাকাবে বদলি হয়ে আসেন। এর আগে তিনি অগ্রণী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও হয়। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি ওয়াহিদা বেগমসহ অগ্রণী ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে আদালত অবমাননার দায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু সেই তথ্য গোপন করে কৌশলে রাকাবে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন ওয়াহিদা বেগম। রাকাবে তাঁর এ নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে ১৮ নভেম্বর উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। এ নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে পরে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। এমডি ওয়াহিদা বেগম বলেন, ‘আমাকে চেয়ারম্যান স্যার একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছেন। আমি সব চিঠিরই জবাব তাঁকে দিয়েছি।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে এটি সঠিক নয়। এখানে যোগদানের পর আগে যা পেয়েছি আমি সেই হিসেবেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’