রাজশাহী বিভাগের পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অংশবিশেষ মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। অঞ্চলটিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে ২০২২ সালে গবেষণা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে ওই গবেষণা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। গবেষণার তথ্যমতে, ১৯৫০ সালের পর রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট থেকে ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০৫১টি, ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ভূমিকম্প হয়েছে ৫টি। শেষ ১০ বছরে হয়েছে প্রায় অর্ধেক।
তথ্যমতে, ১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই বগুড়া চ্যুতির কেন্দ্রস্থলে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া অঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন শিলং মালভূমিতে উৎপত্তি হওয়া ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বগুড়া ও পাবনায় ব্যাপক ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়। ১৯৯১ সালের ৭ আগস্ট নওগাঁ ও রাজশাহী অঞ্চলে ৫ এবং ২০১৮ সালে নাটোর-রাজশাহীতে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। ২০২২ সালের ১ জুন সিরাজগঞ্জে ৪.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ভূকম্পনে কেঁপে ওঠেছিল রাজশাহী। এসব ভূমিকম্পের পরম্পরা বিশ্লেষণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘প্রায় ৪০০ বছর আগে আমাদের এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। এরপর ছোট ও মাঝারি ভূমিকম্প হয়েছে। টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বহু বছর ধরে বিপুল শক্তি সঞ্চিত আছে। এ শক্তির কারণে আগামীতে উত্তরাঞ্চলে শঙ্কা বাড়ছে।’
টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বহু বছর ধরে বিপুল শক্তি সঞ্চিত আছে, এ কারণে আগামীতে উত্তরাঞ্চলে ভূমিকম্পের শঙ্কা বাড়ছে
রাবির অধ্যাপক আব্দুল্যাহ আল মারুফ
গত ২১ নভেম্বর বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর মাধবদীতে উৎপত্তিস্থল (এপিসেন্টার)। ওই ভূমিকম্পে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০ জনের মৃত্যু হয়। কেন্দ্রস্থল থেকে অনেক দূরে হলেও ওই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল রাজশাহী বিভাগের অনেক স্থাপনা আর অবকাঠামো। বড় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের ভবন হেলে পড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে মোট বসতবাড়ি ৫১ লাখ ২৮ হাজার। গ্রামে ৪১ লাখ ৭ হাজার এবং শহরে ১০ লাখ ২০ হাজার। গবেষণার তথ্য বলছে, মোট বসতবাড়ির মধ্যে মাটির কাঁচা বাড়ি শতকরা ৫৬ ভাগ। রাজশাহী নগরীতে ৫৩ ভাগ ভবন নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে নির্মাণ করায় ভূমিকম্প সহনশীল নয়। ৩৪ ভাগ বাড়ি পুরোনো হওয়ায় অনিরাপদ। এ বিষয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, এ অঞ্চলে মাটির তৈরি কাঁচা বাড়ির আধিক্য আছে। এখানে ৫ বা ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
গবেষকরা জানান, কম্পন মাত্রা, ব্যাপ্তি ও ধ্বংসযজ্ঞ বিবেচনায় ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পকে মহাভূমিকম্প বলা হয়। এতে বগুড়া ও পাবনাসহ রাজশাহী অঞ্চলে কাঁচা বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।