বাংলাদেশের আইন সাংবাদিকবান্ধব নয় বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের জন্য রাষ্ট্র অনেক রকম পথ খোলা রেখেছে। আকাশের যত তারা, আইনের তত ধারা। সেগুলোই প্রয়োগ করা হয় সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’-এর তৃতীয় দিনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের (ডিএসএ) অধীনে দায়ের হওয়া ২২২টি মামলা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ। এতে দেখা যায়, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ৩৯৬ জন গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বক্তারা অভিযোগ করেন, ডিএসএ বাতিল হলেও নতুন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টেও বিভিন্ন নিবর্তনমূলক ধারা রয়ে গেছে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য উদ্বেগজনক বলে তাঁরা মনে করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের গবেষণা সহযোগী রোমান উদ্দিন। আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, অধ্যাপক সাজ্জাদ সিদ্দিকী ও ট্রায়াল ওয়াচের জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার মানেকা খান্না ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী। মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাংবাদিক দমন করার প্রবণতা বহু দিনের- ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের পর আলোচনার ভিত্তিতে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। বিগত সরকারের সময়ে এসব আইনের অপপ্রয়োগের উদাহরণ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ ও কলম থামানোর সব নিবর্তনমূলক আইনের অবসান হওয়া প্রয়োজন। শুধু আইন বাতিল করলেই হবে না, রাষ্ট্রের মানসিকতারও পরিবর্তন জরুরি। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের প্রতি প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যেন সাংবাদিক নিবর্তনের নীতিতে না ফেরে এবং সব ধরনের দমনমূলক আইনি পথ থেকে সরে আসে।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছিল, তা কখনোই বিচার শেষ করার জন্য ছিল না; বরং কথা বলা ও লেখা বন্ধ করার জন্য করা হয়েছিল। এখন আইনি কাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে। ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন এখন সিআরপিসি সংশোধনীতে যুক্ত হয়েছে। এটা বড় অগ্রগতি; কিন্তু বাস্তবায়ন এখনো দুর্বল।