রাজশাহী জেলায় আলুর বার্ষিক চাহিদা ১ লাখ ১৩ হাজার ১৪৫ টন। এ বছর ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৫১৭ টন আলু, যা জেলার বার্ষিক চাহিদার নয় গুণ বেশি। গত বছর ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৪ টন। তবে গত বছর কৃষকের লাভ হয়েছিল। ফলে এবার আরও ৩ হাজার ৫৪৫ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে ৯১ হাজার ৬৯৩ টন। কিন্তু এবার এই আলু নিয়েই চরম বেকায়দায় পড়েছেন চাষিরা। এক কেজি আলু উৎপাদনের পর হিমাগারে মজুতে কৃষকের খরচ পড়েছে ৩৫ টাকা। অথচ পাইকারি বাজারে স্থানীয় লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৮ টাকা কেজি দরে। হল্যান্ড বা কার্ডিনাল লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়। এ অবস্থায় গড়ে এক কেজি আলুতেই কৃষকের প্রায় ২০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আলু ব্যবসায়ী, চাষি, কৃষি বিভাগ ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় আলুর বাজার উঠছে না। গত বছরের অক্টোবরে আলু যেখানে বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়, সেখানে এবার দাম ঠেকেছে তলানিতে। মৌসুমের শুরু থেকেই দাম পড়ে আছে। ফলে সব আলু চাষিরই লোকসান হচ্ছে।
জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিঠু হাজি বলেন, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনের পর হিমাগারে রাখতে প্রত্যেক কৃষকের খরচই হয়েছে কমপক্ষে ৩৫ টাকা।
অথচ হিমাগারের গেটে আলুর দাম ১৫ টাকাই পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার কথা দিয়েছিল, কিন্তু আলু কেনেনি। তাই এই লোকসান থেকে আলু চাষিদের উঠে দাঁড়ানো অসম্ভব। তিনি জানান, বেশির ভাগ কৃষক ঋণ কর্জ করে অথবা জীবণের সব সঞ্চয় দিয়ে আলু আবাদ করেছিলেন। এখন কোনোভাবেই আসল টাকা তুলতে পারছেন না। অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন।
সংগঠনটির সভাপতি আহাদ আলী আলুর দরপতনের জন্য অধিক উৎপাদন ও হিমাগারে আলু পচে যাওয়াকে দায়ী করছেন। তার মতে, পাইকারি বাজারে দাম কম হওয়ায় হিমাগার থেকে আলু তুলে বাজারে নেওয়ার খরচও উঠছে না। অনেকে আলু হিমাগার থেকে তুলতে পারছেন না।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান বলেন, গত বছর আলুর দাম বেশি থাকায় কৃষকরা এবার বেশি পরিমাণে চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় আলুর দাম একেবারেই কমে গেছে।