ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে মিরপুরের উইকেট নিয়ে অভিযোগ কম ছিল না! বল নিচু হওয়া ছাড়াও টার্ন ছিল অতিরিক্ত। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে মিরপুরের উইকেটের আচরণে পার্থক্য ছিল ব্যাপক। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন উইকেট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। টেস্ট সিরিজ শেষ। দুই দেশের আর কোনো খেলা নেই মিরপুরে। আগামী চার মাসে মিরপুরে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই। টেস্ট সিরিজ শেষে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটার এখন চট্টগ্রামে। বন্দরনগরীর বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলবে দুই দল। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বসবে ২০ দলের টি-২০ বিশ্বকাপ। তার আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-২০ আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। যদিও বিপিএল খেলে প্রস্তুতি নেওয়ার দীর্ঘ সময় পাবে। তার পরও আইরিশদের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজটির গুরুত্ব একেবারেই আলাদা। কেন না, ইউরোপীয় দলটিও টি-২০ বিশ্বকাপ খেলবে। এখন কথা হচ্ছে, চট্টগ্রামের উইকেট কেমন হবে? বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, উইকেট বানাতে হবে স্পোর্টিং, ‘টি-২০ ক্রিকেট হচ্ছে চার-ছক্কার খেলা। তার মানে এই নয় যে, বোলাররা উপেক্ষিত হবেন। ব্যাটিং ও বোলিং বিবেচনায় স্পোর্টিং উইকেট বানানো হবে চট্টগ্রামে। ম্যাচগুলো হবে স্কোরিং।’
২০১৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে নিয়মিত খেলা হচ্ছে চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ ১৬ ম্যাচ খেলে জিতেছে ৯টি, হেরেছে ৭টি। এ মাঠে সর্বশেষ টি-২০ সিরিজ খেলেছে গত অক্টোবরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল লিটন বাহিনী। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই বছর শেষ হবে টাইগারদের। অবশ্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর অক্টোবরে ৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। সিরিজটি জিতেছিল টাইগাররা। প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের পর তৃতীয়টি হেরেছিল। বছরের শেষ সিরিজটি জিততে চায় বাংলাদেশ। টাইগারদের টিম ডিরেক্টর আবদুর রাজ্জাক রাজ বলেন, ‘যে দলের কাছে বেশিক্ষণ মোমেন্টামটা থাকে, ওরাই জিতে। আমরা চেষ্টা করব ওইটাই যে, যাতে আমাদের কাছে মোমেন্টামটা বেশিক্ষণ থাকে আরকি। উইকেট এখনো দেখিনি। জেতার জন্য যে রান দরকার, সেই রানই করা হবে ইনশাআল্লাহ।’ চট্টগ্রামের উইকেট স্পোর্টিং হবে, জানিয়েছেন বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাসুদ পাইলটন। সাবেক অধিনায়ক একই সঙ্গে জানিয়েছেন, মাঠের আয়তন যে ছোট না হয়, ‘আগে সাধারণত ম্যাচে চার-ছক্কা বেশি হওয়ার জন্য মাঠের আয়তন ছোট করা হতো। মাঠের আয়তন যে স্বাভাবিক হয়। কারণ, বিশ্বকাপে একটি নির্দিষ্ট আয়তন থাকে মাঠের। সেই ভাবনাতেই আয়তন সঠিক হওয়া উচিত।’
চট্টগ্রামের উইকেটে রান ওঠে। ৪২ টি-২০ ম্যাচে দলগত সর্বোচ্চ ৫ উইকেটে ২০৭ রান। দুবার ২০০-ঊর্ধ্ব স্কোর হয়েছে ম্যাচে। ২০২৪ সালে অক্টোবরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুবারই ২০০-ঊর্ধ্ব স্কোর গড়েছে টাইগাইররা। বৃষ্টিস্নাত এক ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ২০৭ রান করেছিল ১৯.২ ওভারে। এরপর খেলাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ৮ ওভারে নির্ধারিত ম্যাচটি টাইগাররা জিতেছিল ২২ রানে। আরেক ম্যাচে ৩ উইকেটে ২০২ রান করেছিল বাংলাদেশ। ১৭ ওভারের ম্যাচ ছিল সেটি। এই মাঠে শয়ের নিচে স্কোর রয়েছে ৪টি। সর্বনিম্ন স্কোর নেদারল্যান্ডসের, ৩৯। ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০.৩ ওভারে এ স্কোর করেছিল নেদারল্যান্ডস। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ড ৬০, হংকং ৬৯ ও ইংল্যান্ড ৮৮ রান করেছিল। বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ১৬.৩ ওভারে ১০৮ রান। ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে রানটি করেছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরি মাত্র একটি। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেলস ১১৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন ৬৪ বলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর তানজিদ তামিমের, ৬২ বলে ৮৯। বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান বলেছেন উইকেটে বোলাররাও সুবিধা পাবেন। চট্টগ্রামের উইকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদের। ১০ ম্যাচে তাসকিনের উইকেট ১৮টি। বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিবের উইকেট ১০ ম্যাচে ১৪টি। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের উইকেট ৭ ম্যাচে ১১টি। সাইফুদ্দিনের উইকেটে ৫ ম্যাচে ৭টি। চলতি সিরিজে খেলবেন রিশাদ ও সাইফুদ্দিন। সেরা বোলিং স্পেল শ্রীলঙ্কার বাঁ-হাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের। শ্রীলঙ্কান স্পিনারের স্পেল ৩.৩-২-৩-৫। টাইগারদের মধ্যে সেরা বোলিং সাকিবের। তার স্পেল ৪-০-২-৫।