চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।
অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলার পলাতক আসামি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করার জন্য ১৭ ডিসেম্বর দিন রাখা হয়েছে। এ মামলায় জয়ের সঙ্গে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও আসামি। তিনি এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, পলকের পক্ষে আইনজীবী এম লিটন আহমেদ শুনানি করেন। এদিন নিজেদের পক্ষে বিদেশি আইনজীবী আনতে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। তাঁদের পক্ষে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার মক্কেল আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করতে চান। এজন্য পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। তা ছাড়া এ দুই আসামির পক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি দিলে আমরা বার কাউন্সিলের কাছে যাব।’
আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের বিরোধিতা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আসামির পক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের জন্য আগে বার কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। তারপর ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিতে হবে।’ তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা আগে যখন আসামির জন্য বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করতে চাইতাম, তখন বার কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে আসতে বলা হতো। বার কাউন্সিল অনুমতি দিত না। সে কারণে আমরা আসামির জন্য বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারিনি।’ এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনি বার কাউন্সিলে যান, অসুবিধা কী।’ এ সময় আইনে কী আছে, তা তুলে ধরেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। একপর্যায়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আসামিপক্ষ সব মেকানিজম করে এসেছেন, যাতে বিচারটা না হয়। তা ছাড়া তারা কখন বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দেবেন, সেটার জন্য ট্রাইব্যুনাল বসে থাকবেন না।’ এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার বলেন, ‘আইনটা এমনভাবে করা যে একেবারে টাইট।’ এরপর ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে ১৭ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। তবে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের পক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো আদেশ দেননি ট্রাইব্যুনাল। যদিও ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ বিষয়ে পরে আদেশ দেওয়া হবে।
জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় কারাগারে পলকের সুবিধা এক মাস স্থগিত : মামলার হাজিরার সময় এবং প্রিজন ভ্যানে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় এবং জাতীয় সংগীত গাওয়ায় জুনাইদ আহমেদ পলকের কারাগারে প্রাপ্ত কিছু সুবিধা এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর আইনজীবী। গতকাল মামলার শুনানির সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর সামনে বিষয়টি তুলে ধরেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এম লিটন আহমেদ।
পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘কারাগারে পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করাসহ টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পেতেন। কিন্তু মামলার হাজিরার সময় এবং প্রিজন ভ্যানে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া এবং জাতীয় সংগীত গাওয়ার কারণে জুনাইদ আহমেদ পলক এখন সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। আমরা বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টিতে এনেছি। এ বিষয়ে আইন মানতে ট্রাইব্যুনাল একটি আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।’