শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনুভূত হয়েছে পঞ্চগড়ে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পঞ্চগড় : বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে সবকিছু। সূর্যের আলো নিভে গেলেই হিম হয়ে আসছে রাত। ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডার তীব্রতাও বাড়তে থাকে। সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় আচ্ছাদিত থাকে চারদিক। এ সময় রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে পরিবহন। হিমালয়ান সমতল অঞ্চলখ্যাত জেলা পঞ্চগড়ে বইতে শুরু করেছে হিমালয়ান হিমবায়ু। প্রকৃতিতে হেমন্তকাল বিরাজ করলেও শীতের তীব্রতা বাড়ছে ক্রমশ। সকালে সূর্যের দেখা মিললে কুয়াশা কেটে যায়। তখন কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। সারা দিন পরতে হচ্ছে শীতের কাপড়। স্থানীয় খেটে খাওয়া জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি ও আশঙ্কা। তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে নেমে যাওয়ায় ঠান্ডার গভীরতা বাড়ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে কুয়াশা এবং শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে। এ মাসেই বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। তখন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের কর্মব্যস্ততা মুখ থুবড়ে পড়বে। শীতের কাপড়ের সংকটেও পড়তে পারেন তারা। গত কয়েক দিন থেকে এ জেলার তাপমাত্রা ১২ থেকে ১০-এর ঘরে ওঠানামা করছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৬টায় পঞ্চগড়ে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। এ তাপমাত্রা ক্রমশ আরও নিচের দিকে নামবে। এদিকে শীতের কারণে বয়স্ক ও শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বয়স্ক ও শিশুরা সর্দি, কাঁশি, হাপানি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলা প্রশাসক কাজী সায়েমুজ্জামান জানিয়েছেন, দরিদ্র শীতার্ত মানুষের জন্য এরই মধ্যে ৩০ লাখ টাকার শীতের কাপড় বিতরণ করা হয়েছে। আরও চাহিদা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দিনাজপুর : বেড়েই চলেছে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে শীতের তীব্রতা। প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা এবং বাড়ছে কুয়াশার সঙ্গে শীতের তীব্রতা। গতকাল দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন। সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আলোয় তা দূর হয়ে যায়। তবে শীত অনুভূত হচ্ছে। সকাল ৭টা পর্যন্ত কুয়াশা দেখা যায়। দিনাজপুরে বিকালের পর থেকে এবং সকাল ৭টা পর্যন্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। রাতে দেখা মিলছে হালকা কুয়াশা। সকাল ৭টা পর্যন্ত কুয়াশা দেখা যায়। এদিকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দিনাজপুরের আকাশে কখনো রোদ, কখনো আলো-ছায়া দেখা যাচ্ছে। রানীরবন্দরের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, শীত বাড়ছে। মানুষ শীতের কাপড় ছাড়া বের হতে পারছে না। বিকালের পর থেকে শীত পড়া শুরু করে এবং রাতে শীতের তীব্রতা বোঝা যায়। এদিকে, গরু-ছাগলকেও শীত নিবারণের জন্য চটের বস্তা পরিয়ে রাখা হচ্ছে। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, শীত আরও বাড়বে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে আসতে পারে। বগুড়া : বগুড়ায় শীত বাড়ায় কাঁপছে জনজীবন। দিনের বেলায় কিছুটা কম শীত অনুভব হলেও রাতে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে শীত নিবারণে মানুষ গরম কাপড়ে নিজেকে জড়িয়ে রাখছেন। শীতে স্টেশন, ফুটপাত ও বিভিন্ন খোলা স্থানে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। বগুড়া জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার দুর্গম যমুনার চরাঞ্চলে। যমুনা নদীসংলগ্ন হওয়ায় এসব এলাকায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। শীতে এসব মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।