মাত্র সাত বছরের চাকরিজীবনে ঘুষ লেনদেন করে হয়েছেন কোটিপতি। ঘুষ লেনদেনের কাজে তিনি ব্যবহার করতেন তিনটি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর। সারা দেশ থেকে এসব নম্বরে আসত ঘুষের টাকা। এর মধ্যে তিনি উত্তোলনও করেছেন ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ হলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার প্রধান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের দুর্নীতির একটি সামান্য খতিয়ান। বদলি-পদোন্নতি সিন্ডিকেটের কেউকেটা হিসেবেই তিনি পরিচিত।
এসব লেনদেন ও দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার বাদী হয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তার। চাকরিতে যোগদানের পর মাত্র সাত বছরের মধ্যে এত বিপুল অর্থ লেনদেনকে দুর্নীতিজনিত আয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুদক। ঘুষ গ্রহণ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক সাব্বির ফয়েজ আগামী বছরের ৩ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুবাদে বদলি-পদোন্নতি সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা এই জাহাঙ্গীর হোসেন বর্তমানে পলাতক। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের দক্ষিণ পিপোলিতা। বাবা মৃত আবুল কাশেম। ঢাকার আমিনবাজারের হাসপাতাল কোয়ার্টারে থাকতেন।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি সারা দেশের স্বাস্থ্যসহকারী ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের বদলি-পদোন্নতির নথি তদারকির দায়িত্বে থাকাকালে এ প্রভাব ব্যবহার করে ১৯ জন স্বাস্থ্যসহকারী এবং একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেন। এসব টাকা নিজের নামে পরিচালিত তিনটি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে বিভিন্ন সময় জমা হয়। দুদক সূত্রে জানা যায়, তাঁর ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা জমা, উত্তোলন ও স্থানান্তর হয়েছে; যা সরকারি কর্মচারী জাহাঙ্গীর হোসেনের বেতনভাতা বা বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীর হোসেনের বিভিন্ন জেলার রূপালী এবং উত্তরা ব্যাংকের শাখা থেকে ও তিনটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরের মাধ্যমে এসব টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা হয়। কুষ্টিয়া, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, পিরোজপুর, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, নওগাঁ, মাগুরা, ফেনী ও শরীয়তপুর জেলা থেকে বদলি ও পদোন্নতির সুবিধা পেতে টাকা পাঠানো হয়। টাকা প্রেরণকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন গোলাম রসূল, নাঈম মোহাম্মদ হৃদয়, আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ নুর আজম, কমলেশ কান্তি দাস, কাজী আনসারুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, কে এস এম শরিফুজ্জামান, মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, মাহমুদুর রহমান, শাহিনুর ইসলাম, নাসির উদ্দিন, আবু সালেহ মোহাম্মদ মামুন, এ এস এম ফারুক আহমেদ, শাহিন আলম, মশিউর রহমান, এস এম মিজানুর রহমান, এস এম হাসান মোরশেদ, জহুরুল হক ও হাবিবুর রহমান। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব লেনদেন ঘুষ বাবদ হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে।