সহকারী শিক্ষকদের পূর্বঘোষিত শাটডাউন কর্মসূচির কারণে গতকালও অচলাবস্থা ছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।
শিক্ষকদের পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে সরকারের আহ্বান ও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারির পরেও আন্দোলনে অনড় ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। তবে গত রাতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ও অংশ নেওয়া ৪২ জন সহকারী শিক্ষককে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রশাসনিক কারণে এ বদলি করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া সারা দেশে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে। এরপর আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতারা বৈঠক করে গভীর রাতে চলমান শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেতারা জানান, সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে রবিবার থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে রবিবার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য তিন দফা দাবি আদায়ে বাস্তবায়ন পরিষদ এবং সংগঠন ঐক্য পরিষদের আলোচনার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা। পরীক্ষার শেষে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়ার কথাও বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এদিকে শিক্ষক আন্দোলনের কারণে একাডেমিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি করার জেরে গতকাল পাবনার এক সহকারী শিক্ষকের মাথা ফাটানোর ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ইটের আঘাতে তাঁর মাথা ফেটে গেছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। আহত শিক্ষকের নাম রাজীব সরকার। তিনি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারিনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। পিরোজপুরের নেছারাবাদে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দুই দফা মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে গতকাল সকালে উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে শিক্ষকরা আন্দোলন করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি বিদ্যালয় গেটের তালা ভেঙে গতকাল পরীক্ষা হলে প্রবেশ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। সরকারি মঙ্গলসুখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান গেট তালাবদ্ধ রেখে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখেন শিক্ষকরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হাতুড়ি ও ইলেকট্রিক মেশিনের সাহায্যে তালা ভেঙে বিদ্যালয়ে ঢোকেন ইউএনও। পরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় বিদ্যালয়টিতে। আন্দোলনকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবির মধ্যে ছিল সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদান। শিক্ষক নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় শাটডাউন ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আপাতত তাঁরা শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন।