সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্ধ ছিল একাডেমিক কার্যক্রম। আন্দোলনের ফলে স্কুলগুলোতে বন্ধ হয়ে গেছে পরীক্ষা কার্যক্রম। স্কুল বন্ধ থাকায় ও বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। ছেদ পড়েছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনায়ও। শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ছন্দপতন ঘটায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাবকরা। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে- শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠন বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা গ্রহণে বাধার সৃষ্টি করছেন। কোথাও কোথাও পরীক্ষা নিতে আগ্রহী শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত কর্মসূচি সরকারি চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি এবং ফৌজদারি আইনেও বিবেচ্য। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আন্দোলনকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের অবিলম্বে কাজে যোগদান করে পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্যথায় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা এবং ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও অদ্যবধি দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল উপজেলা শিক্ষা অফিসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন শিক্ষকরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকদের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খাইরুন নাহার লিপি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিন দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় শাটডাউন কর্মসূচি চলমান থাকবে। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের সব সংগঠন একজোট হয়েছে। দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সঙ্গে ঐক্য পরিষদও শাটডাউন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা এবং ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের হুঁশিয়ারির ব্যাপারে জানতে চাইলে এই শিক্ষক নেত্রী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আন্দোলনকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে নির্ধারণ; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান করা এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদান করা। শিক্ষক নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় শাটডাউন ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হলে এক ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দিতে তারা প্রস্তুত। তবে দাবি আদায় ছাড়া কোনোভাবেই আন্দোলন বন্ধ করা হবে না।