আমরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করি তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের ওপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ওই সময় আমার কপালের ঠিক মাঝখানে শটগানের গুলি লাগে। এ ছাড়া সুরুজ আলী বাবু, বাবুল ফরাজী, আবদুল্লাহ মুস্তাকিন, উসামাসহ ছয়জন শহীদ হন।
গণ অভ্যুত্থানের সময় কুষ্টিয়ার ঘটনায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা বলেন মেহেরপুরের রাইসুল হক। গতকাল ট্রাইব্যুনাল-২ এই মামলায় প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি। পরে তাকে আসামি পক্ষের জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলার একমাত্র আসামি হাসানুল হক ইনুকে এদিন ট্রাইব্যুনালের এজলাসে হাজির করা হয়। এর আগে গত রবিবার প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে এই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। সাক্ষী রাইসুল তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে দেখেছি, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু শেখ হাসিনাকে ফোনকলের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের দমনের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেন, প্রয়োজনে আন্দোলনকারীদের গুলি করা, বোম্বিং করা, যে কোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করার পরামর্শ ও উসকানি দেন।’ কুষ্টিয়ার এই ঘটনায় হাসানুল হক ইনুকে দায়ী করে তার শাস্তি দাবি করেন সাক্ষী। ঘটনার সময় কুষ্টিয়ায় কালি শংকরপুর এলাকায় একটি মেসে ছিলেন জানিয়ে জবানবন্দিতে ২৬ বছর বয়সি মো. রাইসুল হক বলেন, ‘গত বছর ১৮ জুলাই ডিসি কোর্টের সামনে মোড়ে আমরা ৩০০ থেকে ৪০০ জন একত্রিত হলে ডিবি পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের ওপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ওই সময় আমার কপালের ঠিক মাঝখানে শটগানের গুলি লাগে।’
সাক্ষী বলেন, ‘গত বছর ৫ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি সফল করতে আমরা বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের সামনে একত্রিত হই। পাঁচ থেকে ছয় হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল বের করি। মজমপুরের দিকে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা করে। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া বক চত্বরের দিক থেকে ছয় রাস্তার মোড় পর্যন্ত প্রায় দু-তিন হাজার আন্দোলনকারী অবস্থান নেয়। সেখানেও পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। দুপুরের পরে বক চত্বরের পাশে বাবু নামে আমাদের এক আন্দোলনকারীর ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিনই বক চত্বরের আশপাশে আমাদের আরও কয়েকজন সুরুজ আলী বাবু, বাবুল ফরাজী, আবদুল্লাহ মুস্তাকিন, উসামাসহ ছয়জন শহীদ হন।’