অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দাবিদাওয়া নিয়ে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিতসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রাস্তায় আছেন। সরকারের শেষ সময়েও দাবি আদায়ে এখনো রাজধানীতে সরব তারা। এসব দাবিতে চলছে বিক্ষোভ, কর্মবিরতি, অবস্থান ও মানববন্ধন। তারা বলছেন, বিগত সরকারের কাছে দীর্ঘদিন এসব দাবির কথা জানালেও সমাধান পাননি।
তিন দফা বাস্তবায়নে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তিন দফা দাবিতে টানা কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে সারা দেশে সাড়ে ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার এ স্থবিরতা অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, রবিবার রাতের মধ্যে দাবি পূরণের বিষয়ে সরকার কার্যকর সিদ্ধান্ত না দিলে সোমবার (আজ) থেকে শুরু হতে যাওয়া বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করা হবে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষকরা পরীক্ষায় অংশ নেবেন না- এমন ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ফলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। তিনি শিক্ষক নেতাদের বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন না করার আহ্বান জানান। তবে শিক্ষক নেতারা জানান, দাবি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবিগুলো হলো- সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীতকরণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা। নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে মাউশির সামনে বিক্ষোভ : জাতীয় বেতন কমিশনের রিপোর্ট দিয়ে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সামনে গতকাল অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষা ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনরতরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পে-স্কেল বাস্তবায়নের কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সদিচ্ছার অভাবে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ সময় দাবি আদায় না হলে কলমবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারদের অবস্থান কর্মসূচি : মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষার পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষকরা। গতকাল ২৬-৩১ বিসিএস পর্যন্ত পদোন্নতি বঞ্চিত সহকারী অধ্যাপকদের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদায়নের দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, পদোন্নতির উপযুক্ত হলেও প্রশাসনিক জটিলতায় তাদের ন্যায্য পদোন্নতি আটকে আছে। আগেই বেতন গ্রেডভুক্ত হওয়ায় এ পদোন্নতিতে কোনো আর্থিক বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সরকারি ব্যাংকগুলোর পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মানববন্ধন : পদোন্নতিতে বৈষম্য নিরোসনের দাবিতে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেছেন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মচারীরা। এ সময় তারা বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ার পর ঢালাওভাবে ‘সুপারনিউমেরারি’ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যেখানে কোনো নিয়ম না মেনে আত্মীকরণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, নিয়মিত শূন্য ও নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে বিগত সরকারের সময় যারা পদবঞ্চিত তাদেরও মূল্যায়নে নেওয়ার দাবি তাদের। এ ছাড়া মূল্যায়নে অর্থ মন্ত্রণালের আর্থিক বিভাগের অযাচিত হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন বক্তারা।
কর্মবিরতিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা, ১৫ হাজার কেন্দ্রের টিকাদান বন্ধ : দ্বিতীয় দিনের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ছয় দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এতে সারা দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রের ১৫ হাজার কেন্দ্রে বন্ধ রয়েছে টিকাদান সেবা। এতে টিকা গ্রহণসহ সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন মা ও শিশুরা। গত শনিবার থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৬৪ জেলার প্রায় ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী এ কর্মসূচি পালন করছেন।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী স্বাস্থ্য সহকারীরা বলেন, আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত করে এ কর্মবিরতিতে যেতে চাইনি। কর্মকর্তারা আমাদের এ অবস্থান কর্মবিরতি দিতে বাধ্য করেছেন। আমাদের নিয়োগবিধিসহ বিভিন্ন দাবিতে পর্যায়ক্রমে আবেদন করার পরও বিভিন্ন অজুহাতে কর্তৃপক্ষ আমাদের থামিয়ে দিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৫ বার আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করে তাদের কথা রেখেছি। কর্মকর্তারা তাদের কথা রাখেননি। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ কর্মসূচি দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। আমাদের যৌক্তিক ছয় দফা দাবি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মবিরতি চলবে।