একাধিক দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেছেন। রবিবার (৩০ নভেম্বর) প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের পর দেশটির আদালত চলতি সপ্তাহে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তার কারণে নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতির মামলার শুনানি বাতিল করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের দপ্তরে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এবং আন্তরিকভাবে এই অনুরোধটি বিবেচনা করবেন।
নিজ দল লিকুদ পার্টির প্রকাশিত এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, আজ আমার আইনজীবীরা প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমার আবেদন জমা দিয়েছেন। দেশের মঙ্গল কামনা করেন এমন যে কেউ এ উদ্যোগকে সমর্থন করবেন বলে আমি আশা করি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ঘুষ, জালিয়াতি এবং আস্থা ভঙ্গের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ইসরায়েলের পুলিশ। এরপর ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। প্রায় ৫ বছর পর গত ১০ ডিসেম্বর এ মামলায় প্রথমবারের মতো আদালতে হাজিরা দেন নেতানিয়াহু। আদালত থেকে জানানো হয়, নেতানিয়াহুকে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা রয়েছে। এক মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি তার ধনকুবের বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার নিয়েছেন এবং তাদের পক্ষে ইতিবাচক সংবাদ প্রচারের বিনিময়ে মিডিয়া টাইকুনদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। আরেকটি মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী হলিউডের প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আর্নন মিলচানের কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ মার্কিন ডলারের চুরুট, শ্যাম্পেন এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়েছেন
তবে নেতানিয়াহু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, এগুলো তার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’।
প্রেসিডেন্টের ভূমিকা আনুষ্ঠানিক হলেও ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগের ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে এর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি, তাদের আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করতে হয়।
আর ইসরায়েলি আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার প্রথম শর্ত হলো দোষ স্বীকার করা এবং অনুশোচনা প্রকাশ করা। যেহেতু নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, তাই বলা যায়, তিনি দোষ স্বীকার করে নিচ্ছেন।
এর আগে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চলমান দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘পূর্ণ ক্ষমা’ চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট মামলাটি বাতিলের আহ্বান জানানোর পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টে ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাটিকে ‘ডাইনি হান্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প। তিনি এই মামলা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত, অথবা একজন মহান বীরকে ক্ষমা করা উচিত। পরে নেতানিয়াহুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্সে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্ট করেন।
ট্রাম্টের মতে, এই হামলা নেতানিয়াহুর ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস এবং ইরানের সাথে আলোচনায় যোগ দেওয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, অব্যাহত মামলার পক্ষ আমেরিকা ‘সহ্য করবে না’
একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ অস্বাভাবিক হলেও ট্রাম্পের জন্য এটি নতুন নয়। তিনি আগেও এভাবে বিভিন্ন দেশে থাকা তার প্রিয় মানুষদের রক্ষা করতে এমন কাজ করেছেন।
তবে গত সপ্তাহে ইসরায়েলের বিরোধীদলী নেতা ইয়ের ল্যাপিড একটি স্বাধীন দেশের বিচারক বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/কামাল