ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে তফসিল চূড়ান্তের প্রস্তুতি চললেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। সেই সঙ্গে নির্বাচনি মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ ‘সুনিশ্চিত হয়নি’ বলে মনে করছে দলটি। গতকাল ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করে জামায়াতের প্রতিনিধিদল। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন এবং চার নির্বাচন কমিশনার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার মাঝে মাঝে খুব গুরুতর অবনতি আমরা দেখছি। ইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারেনি। এসব পরিস্থিতি নিয়েই আমরা মূলত নির্বাচন কমিশনকে বলেছি- এখনই সিরিয়াস না হলে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণেও নির্বাচন পেছানোর শঙ্কা করছেন না এ জামায়াত নেতা। তিনি বলেন, আমরা কোনো আশঙ্কা করি না। কারণ নির্বাচন তো একটা ভিন্ন জিনিস, আইনের বিষয়। এটার সঙ্গে অন্য কিছুকে রিলেট করা যাবে না; এটা একটা বিশাল সাংবিধানিক আইনগত বিষয়। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, কোনো কোনো বিষয়ে কিছু ‘ইনফরমেশন গ্যাপ’ এবং কিছু অস্পষ্টতা দূর করার জন্য তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এই বৈঠক করেন। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা এটার জন্য জাতি অপেক্ষা করছে। নির্বাচনের ঘোষিত যে টাইমলাইন, আসন্ন রমজানের পূর্বেই নির্বাচন করার ব্যাপারে জাতির কাছে সরকার এবং পলিটিক্যাল পার্টি স্টেকহোল্ডার আমরা যারা কমিটেড, নির্দিষ্ট তফসিল ঘোষণার সময়টা একেবারেই পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট ঘোষণা, সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত কী, সেটা জানবার জন্যই মূলত বিষয়টা আমরা রেইজ করেছি।
ভোটের আগে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করার বিষয়েও কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথাও তারা বলেছেন। তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে বলেছি; প্রশাসনের কর্মরত বড় বড় কর্মকর্তা এবং ইলেকশনের সঙ্গে রিলেটেড অফিসারদের নিরপেক্ষতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেটা আলোচনার বিষয় ছিল। এরপরে আমরা আলোচনায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার যে অভিযান, সেটাকে আমরা খুব ইফেকটিভ দেখছি না।
নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি থেকে সরে এসেছে জামায়াতসহ আট দল : দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সমমনা আটটি ইসলামি রাজনৈতিক দল। এর আগে দলগুলো নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। গতকাল রাতে রাজধানীর পুরানা পল্টনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জোটের লিয়াজোঁ কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে আট দলের শরিক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের জানান, নির্বাচনের দিন গণভোট হলেও তাতে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত করতে ডিসেম্বর মাসজুড়ে আট দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে মেনে নিলেও জোটের অন্য দাবিগুলো বহাল থাকছে বলে জানান নেতারা। আহমাদ আবদুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিস্ট অপরাধীদের বিচার এবং ফ্যাসিবাদের সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিও আমাদের বহাল রয়েছে।’ লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আসন সমঝোতার ভিত্তিতে ইসলামী ঐক্যের ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। সমঝোতার মাধ্যমে একটি আসনে আট দলের একজন প্রার্থী থাকবে।
বৈঠকে আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদসহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।