ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তারিখ পর্যালোচনায় আজ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল সাড়ে ১০টায় আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে এ সভা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত থাকবেন। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এরপর তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ ক্ষেত্রে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে।
কথা বলে জানা যায়, ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোসহ মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যহারের শেষ সময় ও ভোটের তারিখ নিয়ে পর্যালোচনা হবে এ সভায়। ভোটের কাজের সার্বিক বিষয়ে অগ্রগতির পাশাপাশি পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যালট পেপার আনা-নেওয়ার সময়ও চূড়ান্ত হবে এ সভায়।
ভোট প্রস্তুতির সবকিছু গুছিয়ে এনে তফসিলের আগে আইনশৃঙ্খলা সভা ও আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে ইসি। প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে সার্বিক প্রস্তুতি অবহিত করতে ১০ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে যাবেন নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটির সদস্যরা। এরপর দু-এক দিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবেন সিইসি। ইতোমধ্যে ডিসি, ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসন ও এসপি, ওসিসহ পুলিশে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে রদবদল দরকার হলে তা-ও করবে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, রবিবারের কমিশন সভায় তফসিলের সময়সূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তফসিল চূড়ান্ত করা হবে। তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কারা রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার হচ্ছেন তা-ও প্রজ্ঞাপন আকারে জানিয়ে দেওয়া হবে। আইনবিধি-নীতিমালায় নানা ধরনের সংস্কার হয়েছে এবার। আইনবিধি অনুসরণে শতভাগ প্রতিপালনে ইসির শক্ত অবস্থান থাকবে এবং সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে প্রার্থী, দল, ভোটারসহ সব অংশীজনের সহযোগিতা চান তিনি। সবশেষ, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছর নভেম্বরে এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ইসি গঠনের পর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের পথে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে। এর মধ্যে গণভোটের বিষয়টিও যুক্ত হয়। দলগুলোর নানা অবস্থানের মধ্যে সরকারের তরফে দুই নির্বাচন একসঙ্গে করার ঘোষণা আসে। প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিটিভি ও বেতারকে প্রস্তুতির নির্দেশ : নির্বাচন কমিশনের দশম সভা আজ সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে তাঁর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় তফসিলসহ ১০টি বিষয়ে সভার আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তফসিলের আগের ও পরের কার্যক্রম, গণভোট আয়োজনসহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা, মাঠপর্যায়ে সর্বোচ্চ যোগাযোগ, মতবিনিময় ও সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয় ইত্যাদি।
ইসির আন্তমন্ত্রণালয় সভায় ইতোমধ্যে আবহাওয়া-সংক্রান্ত তথ্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। তফসিলের ঘোষণা প্রচারে বিটিভি ও বেতারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি পোস্টাল ভোটিং, সংসদ ও গণভোট-সংক্রান্ত প্রচারণার বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছে ইসি।
বিটিভি-বেতারে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তফসিল ঘোষণার আগে এ-সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিতে চিঠিও দেয় ইসি সচিবালয়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিটিভির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম জানান, ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে এখন সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। নির্বাচন কমিশনে যেমন রেকর্ড করা যায়, তেমনি স্টুডিও রেডি রাখা সম্ভব। সরাসরি কিংবা রেকর্ডেড সম্প্রচারে ইসির যেমন নির্দেশনা তেমন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে। সরাসরি সম্প্রচারের আয়োজন আমাদের সব সময় রেডি আছে। ইতোমধ্যে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের উদ্বোধন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।