মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি নীতি ও টানা সুদহার বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা চরম সংকটে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন এপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। গতকাল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বিনিয়োগ সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সুদহার ব্যবসা পরিচালনাকে প্রায় ইমপসিবল (অসম্ভব) করে তুলেছে।’ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সংলাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উদ্দেশে নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘বিজনেস পিপলরা এ ইন্টারেস্ট রেট সইতে পারছি না। আমাদের জন্য ইমপসিবল হয়ে যাচ্ছে। স্যার, আমরা সুদের হার কমানোর বিপক্ষে না, কিন্তু এখন ব্যবসা করা ভেরি ভেরি ডিফিকাল্ট।’ তিনি জানান, বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম ও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজি ব্যয় (কস্ট অব ক্যাপিটাল) এত বেশি যে উৎপাদন ও রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংলাপে করনীতি নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন এপেক্স ফুটওয়্যারের এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ‘অগ্রিম কর ও উৎসে কর হচ্ছে করসন্ত্রাস। আমরা লাভ করি বা লোকসান করি, সব সময়ই কর দিতে হচ্ছে। অনেক সময় লোকসান বেশি হলেও করও দিতে হয়েছে বেশি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এনবিআরের কিছু সংস্কার যেমন বন্ড অটোমেশন বা এইচএস কোডসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ইতিবাচক হলেও অগ্রিম কর ও উৎসে কর এখন ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে বড় বোঝা।’ টাকা পাচার ইস্যুতে নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘বাংলাদেশে শুধু ব্যবসায়ীরা বিত্তবান হয়েছেন এমন নয়। যে টাকা পাচার হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাচার করেছেন আমলারা। ব্যবসায়ীদের ওপর এর দায় চাপানো ঠিক নয়।’ তিনি দুর্নীতি বা জ্বালানি চুরিতে জড়িত ব্যবসায়ীদেরও আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান। ব্যবসায়ীদের রপ্তানিতে ইডিএফ তহবিল চালু করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, ঢাকার পরিবহনসংকট নিরসন এবং এলডিসি উত্তরণ বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের জবাবে বলেন, ‘ইনফ্লেশন ৮ বা সাড়ে ৭-এর নিচে এলে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামতে পারে। এখনই প্রশাসনিকভাবে সুদ কমানো মারাত্মক পলিসি রিভার্সাল হবে।’
তিনি জানান, অতীতে প্রকৃত সুদহার (রিয়েল ইন্টারেস্ট রেট) নেগেটিভ ছিল, যা বাজার অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এখন সুদহার বাড়ায় বাজার স্থিতিশীল হয়েছে, মুদ্রার বিনিময় হারও স্থিতিশীল। গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, অর্থবছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৫-এর নিচে নেমে আসবে। টেকসইভাবে তা ৪ বা ৩ শতাংশেও নামানো সম্ভব হবে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, উচ্চসুদ, করচাপ ও অবকাঠামোসংকট মিলিয়ে এখন ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, স্থায়ীভাবে মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে কিছু সময় কঠোর অবস্থান বজায় রাখতেই হবে।