ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনে পূর্বঘোষিত ও স্থগিত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে ওই আসনে নাদিরা আখতারের নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে বিএনপি ৩ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল। নতুন ৩৬ প্রার্থীসহ বিএনপি মোট ২৭২টি আসনে প্রার্থী মনোনয়নের ঘোষণা দিল। বাকি ২৮ আসনের তালিকা যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন বিএনপি
মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বাকি আসনগুলোর মধ্যে আমাদের অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যারা আছেন তাদের আসনসহ এবং আমাদের নিজেদের দলের দুই-একটা বিষয়ে ডিসিশন হবে। সেগুলো আমরা যথাসময়ে ঘোষণা করব।’ রাজধানী ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বিএনপি। যে সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছিল, তার মধ্যে এবার চারটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। তবে ঢাকার তিনটি আসনে এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী নেই। এ আসনগুলোর মধ্য থেকে শরিক ও সমমনা দলের প্রার্থীদের জন্য ছাড় দেওয়া হতে পারে। প্রথম দফায় ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর (আংশিক) ও কোতোয়ালি (আংশিক) এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭; সবুজবাগ, খিলগাঁও ও মুগদা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯; ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১০; মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর (আংশিক) নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩; ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও গুলশান-বনানী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭; বৃহত্তর উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ এবং ধামরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-২০ সংসদীয় আসন স্থগিত রেখেছিল বিএনপি।
গতকাল ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০ ও ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এরপরেও বিএনপি এখনো ফাঁকা রেখেছে ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৭ ও ঢাকা-২০ আসন। এর মধ্যে ঢাকা-১৩ আসনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এবং ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থকে বিএনপি সমর্থন দিচ্ছে। তাঁরা দুজন ইতোমধ্যে বিএনপির ‘সবুজসংকেত’ পেয়ে নির্বাচনি এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছেন। ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম। এ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সহায়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমদ অসীমও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এ ছাড়া ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এ আসনে তিনি প্রার্থী হতে পারেন- এমন আলোচনাও ছিল। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে এসব জল্পনার অবসান হলো। বৃহত্তর উত্তরার ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে। গত মাসের শুরুতে বিএনপিতে যোগ দিয়ে এ আসনে দলটির প্রার্থী হওয়ার আলোচনায় ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিএনপি এ আসনে প্রার্থী করেনি। এবারের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এক পরিবার থেকে একজনকে প্রার্থী করার ‘নীতি’ নিলেও একটি পরিবারের ক্ষেত্রে এ নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দফায় টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে প্রার্থী করেছিল বিএনপি। এবার দ্বিতীয় দফায় টাঙ্গাইল-৫ (সদর উপজেলা) আসনে দলটির প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন তাঁর ছোট ভাই এবং দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
ঘোষিত তালিকায় বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলা এবং রাণীশংকৈল উপজেলার দুটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব আবদুস সালাম। পার্বতীপুর ও ফুলবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৫ সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আইন উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি এ কে এম কামরুজ্জামান। নওগাঁ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জাহিদুল ইসলাম ধলু। সিংড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল ইসলামকে। তিনি জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের চাচাশ্বশুর। কাজিপুর উপজেলা ও সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা (কাজিপুর) বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা। মণিরামপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৫ সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন এম ইকবাল হোসেন। লোহাগড়া উপজেলা ও পাঁচটি ইউনিয়ন বাদে নড়াইল সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম। বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমির এজাজ খান। বাউফল উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য মো. শহিদুল আলম তালুকদারকে। মুলাদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীনকে। রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকা ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী হয়েছেন দলের বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু ওয়াহাব আখন্দ খালিদ।
কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম। এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন এলাকার সবচেয়ে ত্যাগী ও নেতা-কর্মীদের দুর্দিনের সাথি বলে পরিচিত খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি) সোহেল, সাবেক জজ রেজাউল করিম চুন্নু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ (ভিপি) রব্বানী। তাদের না দিয়ে জেলা বিএনপির বর্তমান সেক্রেটারিকে দেওয়ায় কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা সদরে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পক্ষ থেকে গতকাল ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা কোনোভাবেই হিসাব মেলাতে পারছেন না যে মাজহারুল ইসলামকে কোন যুক্তিতে বা কী কারণে সংসদ নির্বাচনের মতো নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলো।
নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন শেখ মজিবর রহমান ইকবাল। তিনি বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি। তাঁর মনোনয়ন লাভের খবরে এলাকায় দলমতনির্বিশেষে গতকাল দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
দৌলতপুর, ঘিওর ও শিবালয় উপজেলা নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এ জিন্নাহ কবির। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটি বিগত ১৮টি বছর নেতা-কর্মীদের ওপর ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, মামলা-হামলা, সুখ-দুঃখের সাথি ছিলেন। নানাভাবে তিনি ভুক্তভোগী নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান। কালিয়াকৈর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ছয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর-১ আসনে বিএনপির হয়ে লড়বেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মজিবুর রহমান। পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশীদ। মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসির উল ইসলাম। শিবচর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রথম দফায় প্রার্থী করেছিল ব্যবসায়ী কামাল জামান মোল্লাকে। কিন্তু পরে তা স্থগিত করা হয়। এবার দ্বিতীয় দফায় এ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে নাদিরা আক্তারের নাম ঘোষণা করেছে। শিবচর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত মিঠু চৌধুরীর স্ত্রী নাদিরা শিবচর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। রাজৈর উপজেলা ও পাঁচটি ইউনিয়ন বাদে সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহান্দার আলী খান। দিরাই ও শাল্লা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য নাসির হোসেন চৌধুরী। আর সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে আইনজীবী নুরুল ইসলামকে। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষে লড়বেন সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া। আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. রেজা কিবরিয়া এবারের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। হোমনা ও তিতাস উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুই দফায় ১৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। শুধু চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। দ্বিতীয় দফায় সন্দ্বীপ উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা। রাউজান উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৬ আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৯ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। লোহাগাড়া উপজেলা ও ছয়টি ইউনিয়ন বাদে সাতকানিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৫ আসনে দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজমুল মোস্তফা আমিন। এ ছাড়া কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীক পয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।
যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন, তফসিলে বিলম্ব নয় : সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছি। তফসিলে যেন বিলম্ব না হয়- তাও সিইসিকে বলা হয়েছে। কোনোভাবে নির্বাচনের তফসিল বিলম্বিত হোক তা আমরা চাই না।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভোটার তালিকাভুক্ত হতে কোনো ধরনের সংকট নেই বলেও জানান তিনি। আরও জানান, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগে অ্যাপে নিবন্ধনের হার নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি। তাই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিকালে নির্বাচন ভবনে সিইসি এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় আছি। খোদা না করুন, অনিবার্য কোনো পরিস্থিতি ছাড়া আমরা এই প্রক্রিয়ার বাইরে যেতে চাই না।’
বৈঠকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এ সদস্য ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও দলটির নির্বাচনবিষয়ক কমিটির সদস্য ইসির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া অংশ নেন। এ বৈঠকে তফসিল নিয়ে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বিএনপি চেয়ারপারসনের সবশেষ পরিস্থিতি ও দোয়া কামনা করে বলেন, ‘আমরা আশা করি, দ্রুত যেন নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আল্লাহর মেহেরবানিতে বেগম জিয়া দ্রুতই সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং এসে উনি এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন।’
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে, এ বিষয়ে বিএনপির অবজারভেশন রয়েছে কি না, জানতে চান সাংবাদিকরা। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা নির্বাচন চাচ্ছি, কারণ জনগণের অধিকার আমরা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। ভোটের অধিকার তাদের দিতে চাই। সে অধিকার প্রয়োগ করেই যেন তারা নির্ধারণ করতে পারেন যে আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব কে পাবে। তাদের এই অধিকার বিলম্বিত হোক এটা আমরা কোনোভাবেই চাই না।’
এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভোটার তালিকাভুক্ত হতে কোনো ধরনের সংকট নেই। তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আলোচনার কিছু আছে বলে মনে করি না। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি (তারেক রহমান) ভোটার তালিকায় এসে পড়বেন, নাম ওঠানোর সময়ও পার হয়ে যায়নি।’
তিনি উল্লেখ করেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগে অ্যাপে নিবন্ধনের হার নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি। তাই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দলীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভোটার বেড়ে গেছে। এবার ভোটে দুইটা ব্যালট থাকছে সংসদ ও গণভোটের জন্য। দুইটা ব্যালটে ভোট দিতে আগের চেয়ে সময় বেশি লাগবে। আমরা চাই সব ভোটার যেন ভোট দিতে পারেন।’
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যালট পেপার সরকারি তিনটা প্রেসে ছাপানো হয়। এবার তার বাইরেও ছাপানোর চিন্তা হচ্ছে। আমরা বলছি প্রাইভেট প্রেসে যেন ছাপানো না হয়।’ পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে প্রবাসীদের নিবন্ধনের বিষয় নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা বলেছি শুধু এনআইডির ভিত্তিতে প্রবাসীদের ভোটের নিশ্চয়তা না দিয়ে পাসপোর্টও আমলে নেওয়া উচিত। এটা যেন ভ্যালিড ডকুমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করা হয়।’