বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়াকে দেখতে তাঁর ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসছেন বলে নানা মহলে আলোচনা চলছে। সবারই প্রশ্ন, তারেক রহমান কি দেশে ফিরছেন? ফিরলে কবে ফিরছেন?
গতকাল গণমাধ্যমে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরবেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন। এর আগে, দুপুরে নিজ মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এখনো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তিনি ট্রাভেল পাসও চাননি। চাওয়া মাত্রই তা ইস্যু করা হবে এবং তাঁকে দেশে ফিরতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এদিকে, গতকাল লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে তারেক রহমানের এক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়, তিনি দেশে ফিরছেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি পুরোনো। চলতি বছরের জুন মাসে স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে পৌঁছালে তারেক রহমান তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। ভিডিওটি সে সময় ধারণ করা। এর আগে, শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান বলেন, সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা যে কোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে।’ তিনি এ-ও বলেন, এখনই দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তাঁর জন্য অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এই পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়া মাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’
তারেক রহমানের এমন মন্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে এক দিনেই ওয়ানটাইম পাস (ট্রাভেল পাস) দেওয়া সম্ভব বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর দেশে ফেরায় কোনো ধরনের বাধা নেই।
তারেক রহমান এখনো ট্রাভেল পাস চাননিও বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারেক রহমান চাইলেই তাঁর ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে। তারেক রহমানের ঢাকায় ফেরার বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারকে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য দেওয়া হয়নি। তৌহিদ হোসেন বলেন, দল বা পরিবার সিদ্ধান্ত নিলে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এদিকে, খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশিবিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৮ সালে কারাগার থেকে বেরিয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। তারপর আর তিনি দেশে ফেরেননি। এতদিন বিএনপি নেতাদের অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা মামলা ও বাধার কারণেই দেশে ফিরতে পারছেন না তারেক রহমান। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৫ মাস পরও দেশে ফিরছেন না কেন, বিশেষ করে মায়ের অসুস্থতা জেনেও কেন আটকে আছেন বিদেশ বিভুঁইয়ে এমন প্রশ্ন ও কৌতূহল ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে।