দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে এবার কানাডা, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডসহ ১০ দেশের সঙ্গে হচ্ছে আইনি সহায়তা চুক্তি। এ চুক্তি অনুযায়ী সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সমঝেতার ভিত্তিতে সব পক্ষ কাজ করবে।
সম্প্রতি মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধসংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সভার কার্যবিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও হংকংয়ে। এসব দেশ থেকে অর্থ ফেরত আনতে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে সরকার। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া ও হংকংয়ের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ ১০টি দেশ চুক্তির বিষয়ে আরও বিশদ আলোচনার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে মতামত দিয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে চুক্তি হলে তা আরও বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করে দেশগুলো। এসব দেশে থাকা বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলোকে এ ক্ষেত্রে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত একাধিক নির্দেশনাপত্রও পাঠানো হয়েছে গত সপ্তাহে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করা হচ্ছে নির্বাচনের আগেই মালয়েশিয়া ও হংকং- এ দুটি দেশের সঙ্গে চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হবে।
অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এ দেশ থেকে অন্য এক দেশে যাওয়ার পরে সেই দেশ থেকে নিরাপদ তৃতীয় কোনো দেশে টাকাগুলো পাচার করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ থেকে সরাসরি শেষ গন্তব্যে টাকা পৌঁছায়নি। এজন্য যে কোনো বিদেশি কোর্টে এসব টাকা বাংলাদেশ থেকে এসেছে তা প্রমাণ করা কঠিন হবে। এমনকি পাচার হওয়া অর্থ কোন কোন দেশে রয়েছে এ বিষয়ে কোনো সংস্থা বা দেশের কাছ থেকে পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এসব বিষয়ে আরও পরিষ্কার ও গ্রহণযোগ্য তথ্য পেতে হলে আইনি সহায়তা ও সমঝোতা চুক্তির কোনো বিকল্প নেই বলে মতামত দিয়েছে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধসংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে এখনো অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতিই সম্পন্ন হয়নি। অর্থ ফেরাতে গঠন করা হয়েছে ‘স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি টাস্কফোর্স’। তারা একটা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। তার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশ থেকে গত দুই দশকে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়েছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেগুলো চিহ্নিত করা সত্যিই কঠিন কাজ। একটা ফেরত আনা তো আরও কঠিন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আইনি সহায়তা চুক্তি করতে পারলে হয়তো ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। এমনকি দেশগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশন করা অনেক সহজ হবে।
জান গেছে, গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন এ কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।