পাকিস্তানের বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা নিলোফার। ফাওয়াদ খান আর মাহিরা খানের যুগলবন্দীর কারণেই সিনেমাটি নিয়ে প্রত্যাশা ছিলো অনেক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সিনেমাটি দর্শকদের সেই মনের খোরাক মেটাতো পারলো কি? চাহিদার পারদই বা গললো কতোটা?
মাহিরা-ফাওয়াদ জুটির দুর্দান্ত রসায়নই সিনেমাটির মূল চালিকাশক্তি। প্রচারেরও তারাই ছিলেন প্রধান হাতিয়ার। সত্যি বলতে গেলে, একমাত্র ভরসাও এই জুটি। তবে পাথরে ফুল কিন্তু ফুটলো না।
সমালোচকরা বলছেন, এই দু’জন ফটোজেনিক তারকার পক্ষেও নিলোফারের খাপছাড়া, দুর্বল এবং বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বেমানান গল্পটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
পরিচালক আম্মার রসুল মাহিরা খান, ফাওয়াদ খান, মাদিহা ইমাম, সামিয়া মুমতাজ, ফয়সাল কুরেশির মতো তারকা নিয়েও সিনেমাটিকে জীবন্ত করে তুলতে পারেননি।
তাত্ত্বিকভাবে নিলোফার সাবেকি রোমান্স ধরনের সিনেমা। কোমল দৃষ্টি, দীর্ঘ নীরবতা, কাব্যিক উর্দু আর নস্টালজিক মেজাজ দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করার চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। বাস্তবে সিনেমাটি প্রত্নবস্তুর মতো মনে হয়। এটি এমন একটি যুগের প্রতিনিধিত্ব করছে যেখানে কেবল সৌন্দর্য এবং আকাঙ্ক্ষাই মূল কথা। আর এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবতা থেকে বহু দূরের পথ। যেখানে সচরাচর আমজনতার যাতায়াত নেই। তাই শুধু ভালো চেহারা দর্শককে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেনি।
সিনেমায় মাহিরা নাম ভূমিকায় দৃষ্টিশক্তিহীন নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এখানেই গল্পে গভীরতা, টানাপোড়েন ও সংবেদনশীল হৃদয়গ্রাহী অনুসঙ্গ যোগ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু চলচ্চিত্রে তার অন্ধত্বকে কাব্যিক আর আলঙ্কারিক রূপ দিতে গিয়ে কাহিনি এগোয়নি ঠিকমতো। একজন দৃষ্টিহীন মানুষের হতাশা, নির্ভরতার ক্লান্তি, রাগ বা দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট অপমানও হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে পারেননি পরিচালক।
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা বলছে, এই সিনেমা মানুষকে গল্পের গভীরে নিয়ে যেতে পারেনি। নিলোফার চরিত্রটিকে সরল, নিষ্কলঙ্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে তার আসল কথাই ম্লান হয়ে যায়।
বিশ্লেকরা আরও বলছেন, সিনেমায় লেখক-কবি মনসুর আলি খান (ফাওয়াদ) যখন এমন কারো প্রেমে পড়েন, যার জগৎ তার নিজের জগৎকে মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জ করে, তখন একটি অসাধারণ গল্প তৈরি হতে পারত। কিন্তু নিলোফার সেই পথে আগায়নি। সংঘাত, তীব্রতা, দুর্বলতা, যতবারই সিনেমাটি এসবের মুখোমুখি হয়েছে, ততোবারই পরিচালক পথ হারিয়েছেন। সততার চেয়ে নান্দনিকতাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
একজন সহকারী ম্যানেজারের নীরব প্রেমই সিনেমায় কিছুটা আবেগি আবহ তৈরি করতে পেরেছে। মনসুরের প্রতি তার অব্যক্ত আকাঙ্ক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রের চাপা উত্তেজনার মুহূর্তের জন্যই সিনেমায় কিছুটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই মোড়টিও পরিচালকের দুর্বলতার তোপ কুলিয়ে উঠে প্রাণ পায়নি।
যাকে ভালোবাসা যায়, সে যদি ভালোবাসার প্রতিদান না দেয়, সেই অস্বস্তি ও দ্বিধাকে তুলে ধরার পরিবর্তে পরিচালক বিষয়টিকে তুচ্ছ মনে করে এড়িয়ে গেছেন। পার্শ্বচরিত্রগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। 'নিলোফারে'র দাদি ও অতি কট্টর মামা যেন শুধুই কার্ডবোর্ডের মতো। তারা কেবল নায়িকার পবিত্রতা রক্ষা করার জন্যই সিনেমার দৃশ্যে হাজির ছিলেন
তাই ফাওয়াদ দেখতে অসম্ভব সুন্দর, মাহিরাও জ্যোতি ছড়াচ্ছেন চেহারায়। তারপরও নিলোফার এক দীর্ঘশ্বাস। এটি একটি অসম্পূর্ণ সৃষ্টি, যেখানে সৌন্দর্য এবং রসায়ন ভরপুর থাকার পরেও দুর্বল চিত্রনাট্যের কারণে গল্পটি মাটিতে পড়ে থাকল অবহেলায় পদপৃষ্ট হওয়া বকুলের মতো। যেনো মনে করিয়ে দিলো, ভালোবাসা যতই কোমল হোক, তাকে পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হলে গল্পের কাঠামো ও গভীরতা অপরিহার্য।
সূত্র: গালফ নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল