কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কসংলগ্ন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রাজা চাপিতলা গ্রামে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষদিকে একদিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে গ্রামের নিরীহ ৩২ জন মানুষকে।
ভয়ে গ্রামবাসী পালিয়ে যাওয়ায় সাতদিন মরদেহগুলো পড়ে থাকে সড়ক ও বাড়িঘরের আশপাশে। শেয়াল-কুকুর মৃতদেহ টানাটানি করায় সময়মতো দাফনও করা হয়নি। সাতদিন পর স্থানীয়রা পুকুরপাড়ে ও পুরাতন কবরস্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাড়গোড় সংগ্রহ করে মাটিচাপা দেন।
নিহতদের পরিবার দাবি- এখানে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং শহীদ পরিবারের সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।
সরেজমিন তথ্য অনুযায়ী, এ গ্রামেই ছিল সাবেক এমপি ও শিক্ষানুরাগী আবুল হাশেমের বাড়ি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। যুদ্ধের সময় গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। কোম্পানীগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর যাওয়ার পথে পাকিস্তানি সৈন্যরা এই গ্রামের মধ্য দিয়েই চলাচল করত।
অক্টোবরের শেষদিকে হানাদার বাহিনী প্রথম হামলা চালায় সড়কসংলগ্ন অহিদ উল্লাহ কেরানীর বাড়িতে। বাড়ির নারী-পুরুষ পেছনের পুকুরপাড়ে আশ্রয় নিলে সেখানে একসঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয় ১২ জনকে- যার মধ্যে ছিলেন ওই বাড়ির সাতজন, দুইজন কাজের লোক এবং পাশের বাড়ির তিনজন। এছাড়া রহমান ডাক্তারের বাড়ি, ছত্তার আলীর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
স্থানীয় শহীদুল ইসলাম জানান, হামলার দিন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। মা’কে নিয়ে তারা পাশের গ্রামে পালিয়ে যান। সেইদিনই তার বাবা, চাচা ও বড় ভাইসহ মোট আটজনকে হত্যা করা হয়। এক সপ্তাহ পর পুকুরপাড় থেকে নিহতদের হাড়গোড় সংগ্রহ করে দাফন করা হয়।
রমিজ উদ্দিন বলেন, ওইদিন তার জেঠা, দুই চাচা এবং দাদা অহিদ কেরানীকেও হত্যা করা হয়। শহীদদের পরিবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার কার্ড পেলে তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
আবুল কাশেম জানান, তার বয়স তখন দশ বছর। তার বাবাসহ চাচাতো ভাইকে পুকুরপাড়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পেতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরলেও কোনো সাড়া মেলেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মুরাদনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার খলিলুর রহমান বলেন, রাজা চাপিতলা গ্রামে হানাদাররা ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন চালিয়েছে। এখানে শহীদদের স্মৃতিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ জরুরি। নিহত পরিবারগুলোকেও আর্থিক সহায়তা দিলে তারা উপকৃত হবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। সেখানে যদি গণকবর থাকে, তাহলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা যেতে পারে বলে তিনি জানান।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ